জাতীয় ডেস্ক:
পটুয়াখালীর গলাচিপার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের একটি আর সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের একটি- এই দুটি গ্রামে হাজারো মানুষের বাস। তাদের আত্মিক বন্ধন শত বছরের। কিন্তু দুই গ্রামের মাঝ দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ১৫০ মিটার প্রশস্ত একটি খাল তাদের দূরে রেখেছিল। এবার এই দূরত্ব ঘুচল একটি কাঠের সেতুতে।
এ পথে পারাপারের একমাত্র উপায় ছিল নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো কিংবা ডিঙ্গি নৌকা। যা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য সরকারি দফতরে একাধিক আবেদন করেও সাড়া মেলেনি। অবশেষে উপজেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ১৫০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঠের সেতু নির্মিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের কলাগাছিয়া গ্রাম ও সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের চর মইশাদি গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ধরান্দী খাল। খালের পূর্ব পাড়ে ২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ১টি কলেজ রয়েছে। খালের পশ্চিমপাড়ের শত শত শিক্ষার্থী ও মানুষকে প্রতিদিন এই খাল পার হতে হতো। ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো কিংবা ডিঙ্গি নৌকাই ছিল একমাত্র সম্বল। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩ মাইল ঘুরে আসতে হতো। খরচ হতো কমপক্ষে ৫০ টাকা।
দুই গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে এলাকাবাসী ধরান্দি খালে প্রথম একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামবাসী মিলেই মেরামত করে সাঁকোটি চলাচলের উপযোগী করে রাখছিলেন। বিশেষ করে নারী ও বয়স্কদের এ নড়বড়ে সাঁকো পার হওয়া বেশ কষ্টকর ছিল। কালক্রমে সেটাও বিলীন হয়ে যায়।
কয়েক মাস আগে নড়বড়ে সাঁকোটি খালে হেলে পড়ে গেলে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নজরে আনলে তিনি একটি কাঠের সেতু স্থাপনের পরামর্শ দেন এবং কিছু অর্থ বরাদ্দ দেন। ইউপি চেয়ারম্যান প্রায় ২ মাস চেষ্টা করে ৩০০ ফুট দীর্ঘ এবং ৪ ফুট প্রস্থের একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, গাছের গুঁড়ি পুঁতে তার ওপরে কাঠের পাটাতন বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। সেতুর রেলিং দেয়া হয়েছে কাঠ দিয়ে। সেতুর মাঝখানে করা হয়েছে সুদৃশ্য নৌকার প্রতিকৃতি। উদ্বোধন উপলক্ষে সাজানো হয়েছে বেলুন ও ফেস্টুন দিয়ে।
অবশেষে সেই দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। নির্মিত সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ফিতা কেটে সেতুটির উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল। সে সময় থেকেই সেতু দিয়ে লোকজনের চলাচল শুরু হয়।
বই-খাতা নিয়ে সেতু পার হচ্ছিল চর মইশাদি গ্রামের সিনথিয়া। সে কলাগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
সিনথিয়া বলে, ‘আগে তিন কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে যেতাম। এখন এই সেতু হওয়ায় মাত্র ১৫ মিনিটে কলেজে যেতে পারব। আমাদের কষ্ট দূর হয়েছে।’
কলাগাছিয়া বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, ‘নতুন কাঠের সেতু হওয়ার কারণে আমরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত। এই সেতু না থাকলে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাঈনুল শিকদার বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে এই কাঠের সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। এছাড়া স্বেচ্ছাশ্রম ও গাছের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন এলাকাবাসী। ২ মাস সময় লেগেছে সেতুটি নির্মাণে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, ‘এ খাল পারাপার ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ দুর্ভোগ লাগবে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ কাজ করেছে। আশা করছি, ওখানে স্থায়ী সেতুও নির্মাণ করা হবে। সে বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’