শেখ এনামুল বাসার টিটো,ডুমুরিয়া :
ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর মালোপাড়ার ননিবালা বিশ্বাস। বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। চার বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছে। কাজের থেকে বাড়ী ফেরার পথে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় তার স্বামী। তিন সন্তানের জননী ননিবালা বিশ্বাস। স্বামী বেঁচে থাকতে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এখন দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি পরের বাড়ীতে,পরের ক্ষেতে কাজ করে দুই সন্তানের খাওয়া পরা ও লেখা পড়ার খরচ যোগায়ে আসছিলেন।
বড় ছেলে সম্প্রতি যশোর এম এম কলেজ থেকে ম্যাথম্যাটিকসে মাস্টার্স শেষ করেছে। এখনো কোন চাকরি পাইনি আর ছোট মেয়ে যশোরের ম্যাটস নামক একটি বেসরকারি ইন্সটিটিউট থেকে প্যারামেডিক কোর্স করছে। সংযত কারণে দুই সন্তানের কাপড় চোপড় কেনা থেকে শুরু করে সকল দায়ভার এসে পড়ে তার কাঁধে। এতদিন তিনি কাজকর্ম করে কোনভাবে সন্তানদের খাওয়া দাওয়া সহ অন্যান্য খরচ চালিয়ে আসছিলো।
দেশে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর বাসা বাড়ীর কাজ,ক্ষেত খামারের কাজ বন্দ হয়ে গেছে। এখন তিনি সন্তানদের নিয়ে চরম হতাশার মধ্যও জীবন যাপন করছে। নিজে খাবে কি ? সন্তানদের খাওয়াবে কি ? কিছুই তার মাথায় আসছে না। নিরবে কেঁদে চলেছেন ননিবালা বিশ্বাস। তার সাথে কথা বলার সময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে পরের কাজকর্ম করে কোন ভাবে সন্তানদের নিয়ে জীবন যাপন করছিলাম।
এখন কি করে চলবো ? কিছুই বুঝতে পারছিনা। তিনবেলা খাওয়াতো দূরের কথা দুবেলা খাওয়া কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোন দপ্তর থেকে কোন ত্রান সামগ্রী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি এখনো পর্যান্ত কোন ত্রান সামগ্রী পাইনি। সবাইতো মুখ চিনে ত্রান দেয়। আমাদের দেবে কে ? তিনি ইশ্বরের প্রতি প্রার্থনা করে বলেন,আমরা ত্রান চাইনা। কাজ করে খেতে চাই। আমাদের এই মহামারি ভয়ঙ্কর করোনা থেকে মুক্তি দেও।
আমরা যাতে ঘরের বাইরে যেতে পারি। কাজকর্ম করে খেতে পারি। ননিবালা বিশ্বাসের সাথে কথা বলার সময় আরুতি বিশ্বাস,সবিতা বিশ্বাস,সন্ধ্যা বিশ্বাস,শেফালি বিশ্বাস,সুশীল বিশ্বাস,রুপসী বিশ্বাস,ময়না বিস্বাস,অনুকা বিশ্বাস,চন্দনা বিশ্বাস,মিনতী বিশ্বাস,নয়নতারা বিশ্বাস,অলোকা বিশ্বাস সহ অনেকে এসেছিলেন তাদের কষ্টের কথা জানাতে। তাদের কথা শুনে বোঝা যায়, সকলের অবস্থা ননিবালা বিশ্বাসের মতো। করোনা আতঙ্কে তাদের মধ্যোও বিরাজ করছে চরম হতাশা।
সামনের দিনগুলোতে কি হবে,কি করে খাবে কিছুই বুঝতে পারছেনা তারা। শুধু ননিবালা নয়। চুকনগর মালোপাড়ার অধিকাংশ খেটে খাওয়া পরিবারের মধ্যো বিরাজ করছে চরম হতাশা। চক্ষু লজ্জায় অনেকে পারছেনা কাওকে বলতে আবার অনেকের দিন যাচ্ছে অনাহারে অর্ধহারে। এভাবে চলছে চুকনগর মালোপাড়া বাসীর বর্তমান দিনযাপন।