নিজস্ব প্রতিবেদক :
করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন যুদ্ধকালীন প্রস্তুতী গ্রহণ করতে চলেছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসীদের নিজগৃহে দুই সপ্তাহ সেচ্ছাবন্দী থাকার (কোয়ারেন্টাইন) কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই সুযোগে কালোবাজারী চক্র নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বৃদ্ধি করলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতীয় এই দূর্যোগে একে অপরের কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
গতকাল রাত ৮টায় সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভা থেকে এ আহবান জানানো হয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তাফা কামালের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করেন, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে.কর্ণেল খন্দকার গোলাম মহিউদ্দিন, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: নজরুল ইসলাম, সিভিল সার্জান ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত।
জরুরী মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, কোয়ারেন্টাইনের নির্দেশনা না মানায় সাতক্ষীরা জেলায় তিনজন প্রবাসীর কাছ থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৬১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
একই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট ও মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জেলা প্রশাসক দৃঢ়তার সাথে বলেন, আক্রান্ত দেশ থেকে যেসব প্রবাসী নিজ বাড়ীতে ফিরে এসছে তাদেরকে অবশ্যই দুই সপ্তাহ নিজ গৃহে সেচ্ছাবন্দী থাকতেই হবে। অন্যথায় তাদেরকে জেল জরিমানার আওতায় আনতে প্রশাসন দ্বিধাবোধ করবে না।
পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট ও শাহাজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সাড়ে আট হাজারের মত প্রবাসী সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে। যার ৯০ শতাংশের বেশি ভারত থেকে এসছে।
অষ্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, ওমান, মালদ্বীপ, আমেরিকা, ইউরোপ, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া ও ইতালিসহ অন্যান্য দেশ থেকে বাকিরা ফিরে এসছে। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল ও আক্রান্ত দেশ থেকে যেসব প্রবাসী সাতক্ষীরায় ফিরে এসেছে তাদেকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল খন্দকার গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেসব সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ হয় সে এলাকায় সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহমেদ বলেন, করেনা জাতীয় দূর্যোগ। এটা মোকাবেলায় সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা মোকাবেলায় জনগনকে সচেতন করার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরন করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মোঃ হুসাইন সাফায়াত বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের সিসিইউকে আইসোলেশন ইউনিট হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। যুবউন্নয়ন অধিদপ্তরের নবনির্মিত ভবনকে প্রস্তুত রাখার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১৬৯ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, প্রথম আলো ষ্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জী, পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক আনিছুর রহিম, সাতনদীর প্রধান সম্পাদক ও আরটিভির জেলা প্রতিনিধি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, আমাদের সময় ও মাছরাঙ্গা টিভির জেলা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ¦ল, সময় টিভির প্রতিনিধি মমতাজ আহমেদ বাপী, দেশ টিভির প্রতিনিধি শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির জেলা প্রতিনিধি আবুল কাশেম প্রমুখ।