খুলনা অফিস :
বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করার কথা শুনে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছে প্যাথলজি বিভাগের কর্মকর্তা অনিমেষ সাহা। ১১দিন পালিয়ে থাকার পর তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। শনিবার বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন কবির মংলা হাসপাতালের প্যাথলোজিস্ট অনিমেষ সাহার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অনিমেষ সাহা পালিয়ে আত্মগোপনে থাকায় বন্ধ রয়েছে প্যাথলজি বিভাগের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। তবে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সরকারের জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘ ১১দিন পালিয়ে থাকা এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে হাসপাতালের কর্মচারী এবং স্থানীয় মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর নগরী মোংলা উপজেলার ২’লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে র ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতাল নির্মান করা হয়। এ উপজেলা হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন ৮/১০জন। তারপরেও নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন ৫/৬জন। আর প্যাথলজি বিভাগের ৩জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্টের স্থলে আছেন মাত্র একজন।
দীর্ঘদিন ধরে একজন মাত্র মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট দিয়ে চলে আসছিলো হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের কার্যক্রম। কিন্তু দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের সকল স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকসহ অন্যান্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে সরকারের কঠোর নির্দেশনা সত্বেও মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অনিমেষ সাহা অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়।
মোংলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ০৭ এপ্রিল মোংলা পোর্ট পৌর শহরের খানজাহান আলী সড়কের হাকিম হাওলাদারের ভাড়াটিয়া শাহিনুর আক্তার নামের এক গৃহবধু করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় উপজেলা প্রশাসন করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তাকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়। একই সাথে শাহিনুর আক্তারকে আইসোলেশনে রেখে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেলে পাঠানোর জন্য বলা হয়।
এ খবর শুনেই সন্দেহজনক রোগীর নমুনা সংগহ না করে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অনিমেষ সাহা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে হাসপাতালের প্যাথলোজি বিভাগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে দীর্ঘ ১১দিন প্যাথলোজি বিভাগ বন্ধ থাকায় হাসপাাতলে চিকিৎসাধীন রোগী এবং উপজেলার দুর দুরন্ত থেকে আসা রোগীরা পরীক্সা-নিরীক্ষা নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়ছে।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস রোগীরে দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে জানান, কয়েক দিন যাবত হাসপাতালের প্যাথলোজিস্ট অনিমেষ সাহা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছে। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। সম্ভবত করেনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে সে একটু ভীত হয়ে পড়েছে। তবে তার স্ত্রী ও আতœীয়দের ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন কবির জানান, মোংলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অনিমেষ সাহার ১১দিন পালিয়ে থাকার ঘটনাটি তিনি জানেন না। তবে ১৬ এপ্রিল দুপুরে অনিমেষ সাহার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তার স্বেচ্ছায় অবসরের সময় হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় দুর্যোগ মুহুর্তে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে স্বেচ্ছা অবসরের বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষকে না বলে বা অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপোস্থিত থাকার বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
তবে এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেনোলজিষ্ট অনিমেষ সাহার সাথে মোবাইলে ফোন করেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ##