হোম জাতীয় করোনার প্রভাব : শুকিয়ে গেছে সাজানো বাগান

করোনার প্রভাব : শুকিয়ে গেছে সাজানো বাগান

কর্তৃক
০ মন্তব্য 104 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

গ্রামটির নাম ছিল সাদুল্লাহপুর। অবশ্য কাগজপত্রে এখনও তাই আছে; তবুও ‘ছিল’ বলতে হচ্ছে কারণ, সাভারের বিরুলিয়ার এই গ্রামটিকে এখন সারাদেশের মানুষ চেনে গোলাপগ্রাম নামে। ফুল চাষের সুখ্যাতিতে মানুষের মুখে মুখে গ্রামটির নাম বদলে গেছে। ফুলের সুঘ্রাণ শুধু ভ্রমর নয়, প্রতিদিন হাজারো মানুষকে টেনে আনত এই গোলাপগ্রামে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে এখন শূন্য, নীরব দর্শনার্থী ও পর্যটকমুখরিত এই গ্রাম। বিক্রিবাট্টা বন্ধ হওয়ায় ফুল পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দি পুরো দেশ। ব্যতিক্রম নয় সাভারও। অফিস, আদালত সব বন্ধ। দশনার্থী, পর্যটকরাও ঘরবন্দি। সারাদেশের পথঘাটে যে শূন্যতা, গত বৃহস্পতিবার গোলাপগ্রাম ঘুরেও পাওয়া গেল তারই খণ্ডচিত্র। ফুলের গন্ধে ম-ম করা বাগানগুলোতে এখন ভ্রমর ছাড়া আর কোনো দর্শনার্থী নেই। বিক্রি না থাকায় চাষিরা গাছ থেকে ফুল কাটছেন না। বাগানের পর বাগানে গাছেই মরে ঝরে যাচ্ছে সব ফুল। মরা ফুল স্তূপ করে রাখা হয়েছে বাগানের পাশে। চৈত্রের খরতাপে তা পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

মরা ফুল কাঁচি দিয়ে কেটে স্তূপ করে রাখছিলেন বিরুলিয়ার শ্যামপুরের ফুল বাগান মালিক মাসুদ মিয়া। তিনি জানালেন, করোনা আতঙ্কে বাগানে এখন কেউই আসেন না। শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের পাইকাররাও আসছেন না।

মাসুদ মিয়া জানালেন, সাড়ে তিন বিঘার বাগান রক্ষণাবেক্ষণে তাকে প্রতিদিন পানি ও সার বাবদ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আগে প্রতিদিন পাঁচ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতেন। ‘লকডাউন’ শুরুর পর বিক্রিবাট্টা শূন্যে নেমেছে। বাগান রক্ষার খরচ জোগাতে হচ্ছে পকেট থেকে। শুধু মাসুদ মিয়া নন, বিরুলিয়ার শ্যামপুর, মৈস্তাপাড়া, সাদুল্লাহপুর, বাগ্নীবাড়ি, কালিয়াকৈর, আকরাইন, ভবানীপুর, রাজারবাগ ও সারুলিয়া এলাকার শত শত ফুলচাষির একই দশা।

ফুলচাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, পাঁচ বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে বিক্রি নেই। ফুল তুললে দিনে শ্রমিকপ্রতি ৪০০ টাকা বেতন দিতে হয়। তাই ফুলও তুলছেন না। ফুলবাগানের শ্রমিক মোহাম্মদ আলম বলেন, করোনার ভয় আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে ৩০০ টাকা হাজিরায় কাজ করতে এসেছেন গোলাপগ্রামে। মরা ফুল কেটে ফেলছেন। আলম জানালেন, মালিকদের মতো তারাও বিপাকে পড়েছেন।

গোলাপ বাগানের মালিক ইমরান হোসেন জানান, বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সাভার থানা পুলিশ মাইকিং করে গেছে, বাগানে যেন বহিরাগতদের ঢুকতে না দেওয়া হয়। আগে প্রতি সন্ধ্যায় হাট বসত। সেখানে ফুল বিক্রি হতো। এখন পাইকররা আসছেন না, বিক্রিবাট্টাও একেবারেই বন্ধ।

বাগান মালিকদের দাবি, ব্যবসা বাঁচাতে তাদের সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। না পেলে কারও বাগানই টিকবে না। বিক্রিবাট্টা শুরু না হলে হাতের টাকা খরচ করে তাদের পক্ষে বাগান রক্ষা সম্ভব নয়। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএফএম সায়েদ জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম বন্ধ করা হয়েছে। তাই গোলাপগ্রামে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন