হোম এক্সক্লুসিভ করোনার প্রভাব : জনশূন্য চিড়িয়াখানায় খোশমেজাজে প্রাণীরা

করোনার প্রভাব : জনশূন্য চিড়িয়াখানায় খোশমেজাজে প্রাণীরা

কর্তৃক
০ মন্তব্য 260 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক :

সুনসান নীরবতা। কোলাহল নেই। নির্ঝঞ্ঝাট ছায়াঘেরা পরিবেশে শুধুই পাখির কিচিরমিচির। রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার ভেতরটা যেমন জনমানবশূন্য, আবার বাইরেও একেবারে খাঁ-খাঁ করছে। ভেতরে প্রবেশের সময় চিড়িয়াখানার অ্যানিম্যাল কেয়ারটেকার গোলাম সারওয়ার রনি বলছিলেন, সব কোলাহল থেমে যাওয়ায় তার চোখে ধরা পড়েছে বড় পরিবর্তন।

অ্যানিম্যাল কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করলেও রনি শখের বশে ছবি তোলেন। চিড়িয়াখানার অপূর্ব সব দৃশ্য ধরা পড়ে তার ক্যামেরায়। গত কিছুদিন তিনি চিড়িয়াখানায় বহু অচেনা পাখির দেখা পেয়েছেন। শত শত নতুন পাখি আসছে। দুটি বিরল হুদহুদ পাখিও ক্যামেরাবন্দি করেছেন তিনি। পাখির এত শব্দ তিনি আগে কখনোই পাননি।

এ তো গেল মুক্ত পাখির আগমন বাড়ার গল্প। যে পাখি খাঁচায় বন্দি, সেগুলো কেমন আছে? বর্ণিল পাখিগুলোর খাঁচার সামনে কৌতূহলী দর্শনার্থীর দেখা নেই বহুদিন। করোনাভাইরাসের ধাক্কায় যে পুরো বিশ্ব কাঁপছে, তা যেন বুঝতেই পারছে না জন্তুর দল। হরিণের খাঁচার বাইরে এমন দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। একই অবস্থা বাঘের খাঁচায়ও।

প্রাণীগুলো যে স্বস্তিতে আছে, সেই গল্প জানালেন চিড়িয়াখানার মাংসাশী শাখার কর্মকর্তা গোলাম আযম। তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় দুই হাজার ৭৭৮টি প্রাণী আছে। এখন সেগুলোর মনে ক্লান্তির ভাব নেই, চোখেমুখে ভয় নেই, মন- মেজাজ ফুরফুরে, বেশ উৎফুল্ল তারা। বিরক্ত হচ্ছে না একটুও। খাওয়ার পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে, চিৎকার চেঁচামেচি নেই। এখন প্রাণীগুলোর পরিচর্যারও অভাব হচ্ছে না। মানবশূন্য এমন পরিবেশে নতুন অতিথি এসেছে জিরাফের ঘরে।

২৫ মার্চ ভোরে জন্ম নেওয়া জিরাফ শাবকের নাম রাখা হয়েছে দুর্জয়। প্রচণ্ড গরমের দিনেও ঢাকা চিড়িয়াখানার দর্শকসংখ্যা দিনে গড়ে ১০ হাজারের নিচে নামে না। আর ঈদে দর্শকের আগমন লাখ ছাড়ায়। গত ২০ মার্চ থেকে চিড়িয়াখানা জনশূন্য হতেই পশুপাখির আচরণে নানা ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে শুরু করেছেন চিড়িয়াখানার অন্য কর্মীরাও।

যে কর্মীরা পশুদের খাবার দেওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন, তারা বলছেন- ‘জেব্রা, জিরাফ বা হরিণের মতো স্বভাবগতভাবে শান্ত প্রাণীদের এতদিন দেখেছি খাঁচার কাছাকাছি দিকটা এড়িয়ে চলতে। কারণ ওইদিকেই দর্শকের ভিড় থাকত। তবে এখন ওরা নির্ভয়ে ঘুরছে।’ বেশির ভাগ জন্তুই মানুষকে এড়িয়ে চলে। দর্শক না থাকার ফলে ওরা খুব স্বস্তিতেই আছে। পাখিগুলোকেও স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। ওরাও খাঁচার ধারের দিকে এসে ঘুরছে।

এমন ফাঁকা পরিবেশ পশুপাখির ওপরে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে প্রথমে খানিক সংশয়ে ছিল কর্তৃপক্ষ। তবে যত দিন গড়িয়েছে, তত বোঝা গেছে- দর্শক না থাকায় বেশ খুশি চিড়িয়াখানার প্রাণীদের বেশিরভাগ সদস্য। ১২ দিন মানুষের দর্শন না পেয়েই জন্তুদের আচরণে এমন পরিবর্তন ঘটেছে। এর কি কোনো সুদূরপ্রসারী ফল আছে? আগামী দিনে চিড়িয়াখানা খুললে যখন ফের দর্শকদের ভিড় জমতে শুরু করবে, তখন সেটি কীভাবে নেবে জন্তুগুলো? এ প্রসঙ্গে চিড়িয়াখানার কর্মীরা বলেন, ‘এটা একধরনের অধিকারবোধ। মানুষ এটা এতদিন চেপে রেখেছিল। এবার দীর্ঘদিন মানুষের দেখা না পেয়ে জন্তুদের ওই অধিকারবোধ দেখা দিতে শুরু করেছে।

তারা বলেন, চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের বিরক্ত করার একটি আদিম প্রথা আছে। কিছু অসংবেদনশীল নাগরিক এই কাজ করে থাকে। এগুলো একদম পছন্দ নয় খাঁচাবন্দি প্রাণীদের। এবার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে চিড়িয়াখানায় যে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, তা ধরে রাখতে সামনে মাঝে মাঝে কয়েক দিনের জন্য বন্ধ রাখা উচিত। তাতে প্রাণীগুলো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবে।

মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় যাতে কোনোভাবেই জীবাণুর সংক্রমণ না দেখা দেয়, সেজন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান কিউরেটর নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি শিফটে ৭০ কর্মীকেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।

সব কর্মীকে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারও করতে বলা হয়েছে। সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রাণীদের খাবার সরবরাহে কোনো সমস্যা হচ্ছে হচ্ছে কিনা- এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করে ওই কর্মকর্তা বলেন- মাছ, মাংস, ডিম, ফলসহ মোট ১৬ বিভাগে খাবার আসে। প্রতিদিনের মতো নির্দিষ্ট ঠিকাদাররা নিয়মিত তাদের খাবারের জোগান দিচ্ছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন