হোম জাতীয় এমপি হয়েও লাশবাহী গাড়ি চালিয়েছেন আনার

এমপি হয়েও লাশবাহী গাড়ি চালিয়েছেন আনার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 62 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে ভারতের পুলিশ। বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। টানা ৩ বার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আনার। দীর্ঘ এই সময়ে এলাকায় বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য তার সুনাম রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় কেউ মরা গেলে তিনি তার বড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করতেন এবং শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন। এমনকি নিজে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে মরদেহ বাড়িতে পৌঁছেও দিয়েছেন তিনি।

২০২২ সালে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে একটি ইন্টারভিউ দেন। সেই ইন্টারভিউতে তিনি নিজে অ্যাম্বুলেন্স চালানোর দুটি ঘটনা তুলে ধরেন।

আনার সেই ইন্টারভিউতে বলেন, আমি মাইক্রোবাস এবং মোটরসাইকেল চালাতে পারি। আর মোটরসাইকেল থাকলে কোনো জায়গায় কোনো ঘটনা ঘটলে অনেক দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যায়।

আমার নির্বাচনী এলাকায় উত্তর-দক্ষিণ বঙ্গের প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ সবসময় বেশি থাকে এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে হাইওয়ে থানা, পুলিশ বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়। তবে আমি মোটরসাইকেলে চড়ার কারণে সবার আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

একদিন আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি বাস সজোরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বাসের সব যাত্রী গুরুতর আহত হন। কেউ কেউ মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। তাৎক্ষণিক আমরা সবাইকে উদ্ধার করে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি। তবে বেশিরভাগ গুরুতর আহত হওয়ার চিকিৎসকরা কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রেফার্ড করেন। হাসপাতালে দুটি অ্যাম্বুলেন্স আছে কিন্তু ওই মুহূর্ত ড্রাইভার ছিল না। এদিকে গুরুতর আহত যাত্রীরা মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। তখন নিজেই ড্রাইভিং করে আহতদের যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং তাৎক্ষণিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ার কারণে তারা সুস্থ হয়ে উঠেন। আল্লাহর হুকুম ছিল, যে কারণেই এটি সম্ভব হয়েছিল। যদি সঠিক সময় গুরুতর আহতদের হাসপাতালে না নেয়া যেত হয়তো অনেকের প্রাণহানিও ঘটতে পারত।

আরেক ঘটনা আমার জীবনে ছিল। আমার নির্বাচনী এলাকার মালিয়াট ইউনিয়নের ভিটেখোলা নামক একটি জায়গার এক বাসিন্দা ঢাকায় মারা গিয়েছিলেন। তখন বর্ষা মৌসুম ছিল। মৃত ব্যক্তির বাড়ি যাওয়ার পথে একটি কাচা রাস্তা ছিল। যখন মরদেহ নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা থেকে এসেছে তখন ড্রাইভার বলল পাকা রাস্তা থেকে আর কাচা রাস্তায় যাবে না। তার ভয় ছিল, কাচা রাস্তায় গর্ত আছে কিনা, গাড়ি আটকে যায় কিনা। তখন সে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে চাবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমিও মোটরসাইকেল চালিয়ে জানাজার উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথেই দেখলাম লাশের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ড্রাইভারের তুমুল ঝগড়া। ড্রাইভার কাচা রাস্তা দিয়ে যাবেই না। তখন আমি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার থেকে চাবিটা নিলাম। ড্রাইভারকে বললাম, তোমার গাড়ির দায়িত্ব আমার, আমিই গাড়ি চালিয়ে যাব। তখন আমি নিজেই কাদা রাস্তায় আস্তে আস্তে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়।’

এদিকে আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধারের খবর শুনে কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। অনেকেই এমপির মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে পুরো এলাকায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এমপি আনারের এ ধরনের এ ধরনের মৃত্যু তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না আত্মীয়স্বজন, নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। ১৬ মে থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। বুধবার কলকাতাত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আনারের জন্ম ৩ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে। পেশায় ব্যবসায়ী আনার আওয়ামী লীগ কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনি তৃতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন।

ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে তিনবার (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নির্বাচিত আনার একজন ক্রীড়া সংগঠক এবং একসময়ের জনপ্রিয় ফুটবল খেলোয়াড়।

ছাত্রজীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে শুরু করেন। স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে ভোটের রাজনীতি শুরু করেন তিনি। এরপর বিশাল ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন আনার। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও তিনি জয়ের ব্যবধান দিয়ে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন