অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় নতুন করে ভাগ্য খুলেছে বিশ্বের শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের। শুল্ক স্থগিত ঘোষণার প্রথম দিন বুধবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বড় শেয়ারবাজারগুলোয় মূল্যসূচক ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে ধনকুবেরদের ভাগ্য খুলে যায়। কারণ, তাদের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর আবার বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিশ্বের শীর্ষ ১০ অতিধনীর প্রত্যেকেরই সম্পদের মূল্য বেড়েছে। সব মিলিয়ে তাদের নিট সম্পদমূল্য বেড়েছে ১৩১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। সম্পদমূল্য বৃদ্ধির নিরিখে সবার ওপর আছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ সহযোগী ইলন মাস্ক। তার সম্পদের দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। এতে তার সম্পদমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮০ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার ৯০ কোটি ডলার। প্রসঙ্গত, এক বিলিয়নে ১০০ কোটি।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন বৈশ্বিক ই-কমার্স অ্যামাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস। তার সম্পদমূল্য ১৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮৬০ কোটি ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ২০ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার।
শতকোটিপতিদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। তার নিট সম্পদমূল্য বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার। এতে তার সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২০২ দশিমক ৬০ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ স্থানে থাকা ল্যারি এলিসনের সম্পদমূল্য ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ১৭৪ দশমিক ৮ বিলিয়নে উঠেছে।
পঞ্চম স্থানে আছেন বিশ্বব্যাপী ‘বিনিয়োগ গুরু’ খ্যাত ওয়ারেন বাফেট। তার সম্পদের মূল্য ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।
২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্য আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সপ্তাহজুড়ে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন দেখা গেছে। মূলত এই সময় শেয়ারের দাম কমেছে। ৩ এপ্রিল বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনীর সম্পদমূল্য মোট ২০ বিলিয়ন ডলার কমে যায়। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্সের ১৩ বছরের ইতিহাসে এটি ছিল এক দিনে অতিধনীদের সম্পদের চতুর্থ বৃহত্তম পতন। কোভিড-১৯ মহামারির পর এত বড় পতন আর হয়নি। ব্লুমবার্গের সম্পদ সূচক অনুসারে, শতকোটিপতিদের অর্ধেকের বেশিরই এমন পরিণতি হয়েছে সেদিন। গড়ে তাদের সম্পদমূল্য কমেছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
শীর্ষ অতিধনীর তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা বার্নার্ড আর্নল্ট অ্যান্ড ফ্যামিলির সম্পদমূল্য বেড়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। এতে তার সম্পদমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।
সপ্তম স্থান পাওয়া ল্যারি পেইজের সম্পদমূল্য ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ বা ১১ দশমিক ১ বিলিয়ন বেড়ে হয়েছে ১৩২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
অষ্টম শতকোটিপতি সের্জেই ব্রিনের সম্পদের মূল্য ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ বা ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন বেড়ে ১২৭ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
নবম স্থানে থাকা স্টিভ বালমারের সম্পদমূল্য বেড়েছে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। এতে তার সম্পদমূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় দশম স্থানে থাকা বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি আমানিকো ওর্তেগার সম্পদ বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। তাঁর সম্পদমূল্য বেড়ে হয়েছে ১১৬ বিলিয়ন ডলার।
বাস্তবতা হলো, প্রথম ২০ জন শীর্ষ অতিধনীর মধ্যে ১৯ জনেরই সম্পদের মূল্য বেড়েছে। বাকি একজনের সম্পদ অপরিবর্তিত ছিল। অর্থাৎ প্রথম বিশে কারও সম্পদমূল্য কমেনি। সার্বিকভাবে এই তালিকায় থাকা অধিকাংশ ধনীরই সম্পদমূল্য বেড়েছে। যেসব শতকোটিপতির সম্পদ কমেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। তার সম্পদমূল্য কমেছে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
অতিধনীদের সম্পদমূল্য প্রতি মুহূর্তেই বাড়ে বা কমে। মূলত তাদের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামের ওপর নির্ভর করেই প্রতিদিন সম্পদমূল্য ওঠানামা করে। যেমন আগের দিন সম্পদমূল্য কমে যাওয়ার পর গতকাল আবারও তা বেড়েছে।