হোম আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইরান: আল জাজিরায় পেজেশকিয়ানের সাক্ষাৎকার

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইরান: আল জাজিরায় পেজেশকিয়ানের সাক্ষাৎকার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 46 ভিউজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে, প্রয়োজনে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইরান। আল জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে কথাটি বলেছেন।

বুধবার (২৩ জুলাই) আল জাজিরার সম্প্রচারিত একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার দেশ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে কোনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। তিনি যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে আশাবাদী নন। তিনি নিশ্চিত করেন, তেহরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে তার পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গত মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের অবসানের পর এটিই আল জাজিরায় পেজেশকিয়ানের প্রথম সাক্ষাৎকার। এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ভারী বোমা হামলা চালায়।

আল জাজিরা জানিয়েছে, এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, তারা সংঘাতের পর ইরানের চলমান পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার সমাধান খুঁজছে।

পেজেশকিয়ান আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা যে কোনো নতুন ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের গভীরে আঘাত হানতে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ইরান ১২ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটানো যুদ্ধবিরতির ওপর নির্ভর করছে না। পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা এটি সম্পর্কে খুব একটা আশাবাদী নই।’

‘এজন্যই আমরা যে কোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি এবং যে কোনো সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত রেখেছি। ইসরায়েল আমাদের ক্ষতি করেছে এবং আমরাও তাদের ক্ষতি করেছি। তারা আমাদের ওপর শক্তিশালী আঘাত করেছে এবং আমরা তাদের গভীরে প্রচণ্ড আঘাত করেছি, কিন্তু তারা তাদের ক্ষতি গোপন করছে।’

ইরানি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরায়েলের হামলা, যার মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় সামরিক ব্যক্তিত্ব এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করা হয়েছিল এবং পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল – ইরানের শ্রেণিবিন্যাসকে ‘নির্মূল’ করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা তা করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

২৪ জুন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ইরানে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। যার মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক বলে জানা গেছে। ইসরায়েল কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে।

সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে

পেজেশকিয়ান বলেন, আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, পারমাণবিক সক্ষমতার উন্নয়ন ‘আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে’ পরিচালিত হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘ট্রাম্প বলেছেন যে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়। আমরা এটি মেনে নেই, কারণ আমরা পারমাণবিক অস্ত্র প্রত্যাখ্যান করি। এটি আমাদের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, মানবিক এবং কৌশলগত অবস্থান।’

পেজেশকিয়ান আরও বলে, ‘আমরা কূটনীতিতে বিশ্বাস করি, তাই ভবিষ্যতের যে কোনো আলোচনা অবশ্যই যুক্তি অনুসারে হতে হবে এবং আমরা হুমকি ও নির্দেশ মেনে নেব না।’

তিনি বলেন, ট্রাম্পের দাবি – ‘আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শেষ হয়ে গেছে’ তা কেবল একটি বিভ্রম। আমাদের পারমাণবিক ক্ষমতা আমাদের বিজ্ঞানীদের মনে, স্থাপনা-অবকাঠামোর মধ্যে নয়।’

পেজেশকিয়ানের মন্তব্য ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির আগের মন্তব্যের প্রতিধ্বনি। যিনি সোমবার সম্প্রচারিত মার্কিন সম্প্রচারক ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তেহরান কখনই তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। তবে পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার ইস্যু আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য তারা উন্মুক্ত।

ইসরায়েল নেতৃত্বকে ‘উত্খাত’ করতে চেয়েছিল

১৫ জুন তেহরানে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক সভায় পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের তাকে হত্যার চেষ্টার বিষয়েও বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি সামান্য আহত হন বলে জানা গেছে।

হত্যা প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক ব্যক্তিত্বদের হত্যার পর ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি কমান্ডারদের একটি পরিকল্পনার অংশ ছিল, ‘দেশকে সম্পূর্ণরূপে উৎখাত করার জন্য বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলার’ লক্ষ্যে। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রেক্ষাপটে কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে তেহরানের হামলা কাতার এবং তার জনগণের ওপর আক্রমণ ছিল না।

তিনি বলেন, আমাদের এবং কাতার রাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা উচিত – এমন কোনো চিন্তা বা কল্পনাও নেই।

হামলার দিনও তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে ফোন করে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে এবং সততার সাথে বলছি, আমরা কাতার রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ করিনি, বরং আমরা আমেরিকার একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছি, যারা আমাদের দেশে বোমা হামলা চালিয়েছে। কাতার এবং এর জনগণের প্রতি আমাদের সমস্ত উদ্দেশ্য ভালো এবং ইতিবাচক।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন