জাতীয় ডেস্ক:
নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুসারে তিনটি কারণে কাউকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য করা যাবে। দুই মাসের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করা যাবে। তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না, ট্রেড লাইসেন্সও নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যে তিনটি কারণে কাউকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঘোষণা করা যাবে সেগুলো হলো- সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করেন, যে কারণ দেখিয়ে ঋণ নিয়েছেন, সেই কারণে ব্যবহার না করে অন্য কারণে ব্যবহার করলে এবং যেসব কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন পরে সেগুলো যদি ভুয়া বলে চিহ্নিত হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যমান আইনে একজন ব্যক্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে পারবেন এটি বেঁধে দেয়া ছিল না। এখন বলা হচ্ছে, একই পরিবার থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার নেয়া যাবে না।
‘বর্তমান আইনে পরিচালকদের সংখ্যা নির্দিষ্ট ছিল না। এখন এটিকে দুইজন স্বতন্ত্র এবং সব মিলিয়ে ১৫ জন পরিচালক থাকতে পারবেন। তবে একটি পরিবার থেকে শেয়ারের পরিমাণ ৫ শতাংশের কম হলে একজন পরিচালক থাকবেন। ৫ শতাংশের বেশি হলে সর্বোচ্চ দুজন থাকতে পারবেন। এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না,’ যোগ করেন সচিব।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে পরিচালকের কোনো মেয়াদ বেঁধে দেয়া ছিল না। এখন পরিচালকের মেয়াদ তিন বছর করা হচ্ছে। পর পর তিন মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন।
‘ব্যাংক সাবসিডিয়ারি কোম্পানি তৈরি করতে পারে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি কোম্পানি করা যাবে না। সুদ মওকুফের বিষয়ে বিদ্যমান আইনে কোনো নির্দেশনা ছিল না। এখন বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সুদ মওকুফ করা যাবে না। সম্পূর্ণ সুদ কখনো মওকুফ করা যাবে না। কস্ট অব ফান্ড অবশ্যই আদায় করতে হবে।’
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা ও শাস্তি বাড়ানো হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত না মানার শাস্তি ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ করা হচ্ছে। বিধিবিধান লংঘন করে ঋণ দিলে বিদ্যমান আইনে প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হয়। এটিকে সংশোধন করে বলা হয়েছে, ১০ লাখ টাকা বা ছাড়কৃত ঋণের বিদ্যমান স্থিতির মধ্যে যেটি বেশি সেটি প্রত্যেক পরিচালক ও কর্মকর্তাকে জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।
‘যখন একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের একটা তালিকা রাখবে। তালিকা হওয়ার পর যখন তারা নোটিশ পাবেন, সেই নোটিশ পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ঋণগ্রহিতার কাছে তার প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি ক্ষেত্রমতে তার পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ক্রমে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করবে এবং এই রূপ মামলা সংশ্লিষ্ট ঋণ বা অগ্রিম বা পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ ঋণ আদালতের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে না। মানে তার বিরুদ্ধে সহসা মামলা করা যাবে’, যোগ করেন তিনি।
মাহবুব হোসেন আরও বলেন, যখন কেউ ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির তালিকাভুক্ত থাকবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে ঋণখেলাপির তালিকা প্রস্তুত করতে পারবে এবং বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্সে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের (আরজেএসসি) কাছ থেকে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। মানে যখন কেউ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত থাকবেন, পরবর্তী কোনো ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অথবা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
দুই মাসের মধ্যে যদি কেউ ঋণ শোধ না করেন, সরাসরি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে।