হোম ফিচার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিট নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাঁপ, বিগত নির্বাচনে জামানত হারানোরাও প্রার্থী হতে চান

যশোর অফিস :

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা চলছে সারাদেশে। যার ঢেউ পড়েছে যশোরেও। তবে দলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিট নেতারা দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছে। দলের জেলা পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিট নেতাদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আর এতে করে তীর্ণমূল নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের দানা বেঁধেছে। শুধু তাই নয়, বিগত নির্বাচনে জামানত হারানো প্রার্থীরা এবারও নৌকা প্রতীক পেতে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন।

এদিকে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে স্ব স্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। চলছে লবিং তদবির ও দৌড়ঝাপ। ধর্না দিচ্ছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে।

সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী আবার ঢাকায় গিয়ে নিজ নিজ রাজনৈতিক গুরুদের সাথে দেখা করে প্রার্থী হওয়ার জানান দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। নিজের পক্ষে মনোনয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সাংসদসহ জেলা সভাপতি-সম্পাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নিজ এলাকায় ব্যানার, পোস্টারসহ নানা তদবির-সুপারিশও শুরু করেছেন।

এছাড়াও নিজেদেরকে যোগ্য প্রার্থী প্রমাণে মরিয়া নেতাকর্মীরা। টার্গেট একটিই চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা। অনেকে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে নানা কৌশল অবলম্বন করে দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। যেভাবেই হোক নৌকা প্রতীক চাই-ই চাই এমনই মনোভাব সবার।

যশোর সদর উপজেলা কচুয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা পেতে মরিয়া সাহের খান নামে এক চলচিত্র অভিনেতা। সাহের খানের বাবা এলাকার চিহ্ণিত রাজাকার ছিলেন। তাকে দলীয়ভাবে সমর্থন করে মনোনয়নের জন্য নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এতে করে এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান বহুবিতর্কিত আব্দুল আজিজ বিশ্বাসের ছেলে শামীম রেজার নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। বিগত নির্বাচনে আব্দুল আজিজ বিশ্বাস নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। আব্দুল আজিজ বিশ্বাস এক সময় জাতীয় পার্টি, পরবর্তীতে জাকের পার্টি এবং বিএনপির সময় বিএনপি করেছেন। তার বিরুদ্ধে ১/১১ সময় পুলেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগে মামলা রয়েছে।

এই ইউনিয়নে বিগত নির্বাচনে জামানত হারানো আনোয়ারুল করিম আনুও এবার নৌকা পেতে দলীয় নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। তাকেও এবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রে নাম পাঠানো হয়েছে। শারীরিকভাবে অসুস্থ্য ওয়ানম্যান শো নেতা ২০১৬ নির্বাচনে ৩২ হাজার ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ১৮৫ ভোট পেয়ে নিজের জামানত হারিয়েছিলেন।

চাঁচড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান সাবেক জেলা যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির নেতা আব্দুর রাজ্জাক ফুল। যার হাতে এখনো এলাকার আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া কর্মীদের রক্ত লেগে রয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ফুল বিএনপির প্রয়াত শীর্ষ নেতা তরিকুল ইসলামের হাত ধরে বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে একবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তিনি এখন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা। প্রয়াত সাংসদ খালেদুর রহমান টিটোর সাথে তিনিও আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তিনি এখন নৌকা পেতে মরিয়া।

নৌকা চান আব্দুল রাজ্জাক ফুলের ভাইরা এক সময়ের ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির পিকুল। ফিরোজের ভাই মুকুল ৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। মুকুল বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয়। তার নামে নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কোতয়ালী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। পিকুলের বোন জামাই শাহবুদ্দিন ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি।

এছাড়া তার আরো এক বোন জামাই আনোয়ার হোসেন পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর হাজী মুকুলের ক্যাডার। তার নামে নাশকতাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সদর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান বিএনপির এক সময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার আনিচুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটনের স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ার। বউকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে নামিয়েছে লিটন। ফিঙে লিটন এখন বিদেশে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ইফতেখার হোসেন আগ্নির ব্যবসায়িক পাটনার। তার বোন জামাইসহ ক্যাডার বাহিনী এখনো বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।

ফতেপুর ইউনিয়নে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন আওয়ামী লীগের সোহরাব হোসেন। তিনিও এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

শুধু কচুয়া, ফতেপুর, চাঁচড়া নয় এ রকম প্রতিটি ইউনিয়নের বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেতে মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় নতুন করে দলে বাড়ছে বিভক্তি ও কোন্দল। নিজেদের দল ভারী করতে ঘটছে অনুপ্রবেশকারীদেরকে মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নামের তালিকা। আর এই অনুপ্রবেশের সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ী, বিএনপি-জামায়াত ও বিভিন্ন দল থেকে আসা সুবিধাভোগীরা। আওয়ামী লীগের নেতারা নিজের গ্রুপ-বলয় শক্তিশালী করতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া বাড়ছে হাইব্রিডের সংখ্যাও।

জেলার শীর্ষ নেতারা দলে দীর্ঘদিনের ত্যাগীদের চেয়ে নিজের গ্রুপের লোক ও অর্থ-সম্পদ প্রাধান্য দিচেছন বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে দলের ত্যাগী নেতারা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। আর এতে তৃণমূলে সহিংসতার শঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। তবে বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছেন না দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাদের দাবি, তৃণমূলকে উপেক্ষা করে প্রার্থী চুড়ান্ত করলে তা হবে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন