হোম অন্যান্যসারাদেশ আমনের বীজ সংকটে খুলনাঞ্চলের কৃষকরা, কয়েকগুণ দামে বিক্রি

আমনের বীজ সংকটে খুলনাঞ্চলের কৃষকরা, কয়েকগুণ দামে বিক্রি

কর্তৃক
০ মন্তব্য 129 ভিউজ

খুলনা অফিস:
আমন চাষের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথেই দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। বিভিন্ন উপজেলায় কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। এই সুযোগে বিক্রেতারা দ্বিগুন দামে বিক্রি করছেন বীজ। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তাঁরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) থেকেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী সপ্তাহ নাগাদ বীজ দেওয়া সম্ভব হবে।

খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএডিসি’র বিআর-২২, বিআর-২৩, বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ বীজের মূল্য ৩০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি’র এক বস্তা কৃষক পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই বীজ এখন ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিআর ২৩ এর চাহিদা এ অঞ্চলে সবথেকে বেশী।

বিএডিসি খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র বলছে, এ বছর খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট কৃষি অঞ্চলে বিএডিসি’র বিরি ২৩ আমন বীজের চাহিদা ছিল প্রায় ৮শ’ মেট্রিক টন। চাহিদা অনুযায়ী বীজ পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত ২৩৮ মেট্রিক টন বীজ পাওয়া গেছে। যা এ তিন জেলার ৪০৫ জন ডিলারের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়েছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী এর মধ্যে বরগুনা জেলায় ১১২ টন ও পটুয়াখালী জেলায় ৯৯ টন বীজ সরবরাহ করা হয়। কৃষকদের অভিযোগ, বিএডিসি’র কতিপয় কর্মকর্তা ও ডিলার যোগসাজসে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে এসব বীজ বিক্রি করছেন।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, জেলায় এবছর ৯২ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে।যা গত বছরের থেকে ২৮৭ হেক্টও জমি কম। এরমধ্যে ১১শ’৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড, ৭০ হাজার৮৫০ হেক্টর জমিতে উপসী এবং ২০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাত চাষ করা হবে। তবে সে অনুযায়ী বীজ পাচ্ছে না খুলনার কৃষকরা।
কয়রা উপজেলার ৬ নং কয়রা গ্রামের কৃষক মোস্তাজিবুল হক মনি বলেন, উপজেলার বিভিন্ন দোকানে ঘুরেও বীজ পাওয়া যায়নি। পরে স্থানীয় এক বীজ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এক বস্তা বিআর-১০ ধান ১৪শ’ টাকা দরে কিনেছেন।

এ উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বতুল বাজার গ্রামের কৃষক আল মামুন জানান, বীজের ব্যাপক দাম। ১২-১৪শ’ টাকার নিচে কোন বীজ নেই। সরকারি বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ১৫ দিন আগেও ৮শ’ টাকায় ১ বস্তা বীজ ধান কেনেন।
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী মিজান বলেন, বীজ সংকটের বিষয়ে কৃষকরা তার নিকট কোন অভিযোগ করেননি। ৯০শতাংশ বীজতলা তৈরির কাজ শেষ বলে তিনি জানান।

বীজ সংকটের একই অভিযোগ ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষকদেরও। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ১৫ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯০শতাংশ বীজ তলা তৈরি হয়েছে। শুরু থেকেই বীজের সংকট ছিল। নতুন করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে।

দাকোপ উপজেলাতেও বীজের ভয়াবহ সংকট। এ উপজেলায় ১৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে আমর আবাদ হবে। এ উপজেলায় ৫৬৩ মেট্রিকটন বীজ ধানের চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৭ মেট্রিক টন।
দাকোপের কৃষক আঃ করিম হাওলাদার বলেন, বীজের জন্য হাহাকার। তিনি ধান ফলাতে ১৫শ’ টাকা দরেও ১০ কেজি বস্তার ধান কিনেছেন।
ডিলারদের একটি সূত্র জানায়, কতিপয় ডিলার সিন্ডিকেট করে বিএডিসি’র কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বরাদ্দের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বীজ তুলে মজুত করেছেন। এতে অন্য ডিলাররা ওই ডিলারদের কাছ থেকে বেশি মূল্যে বীজ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

বীজ সংকটের বিষয়ে বিএডিসি’র উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে দেরিতে চাষাবাদের জন্য বারি ২৩ ধানের চাহিদা বেশী। এ ধানের চাহিদা তিন জেলা মিলে ৮শ’ মেট্রিক টনের মত। এ পর্যন্ত ডিলারের হাতে গেছে ২৩৮ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, কৃষকরা নিজেদের মজুদ করা বীজের ওপর নির্ভর করে বেশি। এতে চাহিদার তারতম্য ঘটে। ফলে বীজ পেতে কিছু সমস্যা হয়েছে। বীজ-সংকট ও নানা সমস্যা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে সব জানানো হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই সমাধান হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন