ইবি সংবাদদাতা:
জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ওয়াসিফ আল আবরার নামে এক সাংবাদিক মারধরের শিকার হয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। ওয়াসিফ কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ওয়াসিফ গত জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ‘দুর্বৃত্ত’ সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট হল থেকে তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু হল থেকে স্থায়ীভাবে না গিয়ে অবৈধ সিটে মাঝে মাঝেই ওই হলে থাকতেন আবরার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তাকে ৩দিনের মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলেন হল প্রভোস্ট। এরপর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াসিফ। এসময় সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, সাইম আহমেদ ও সাজ্জাত শেখসহ একটি পক্ষ জানতে চান কেন আবরার হল ছেড়ে যাচ্ছে? এতে শিক্ষার্থীরা উচ্চবাচ্য শুরু করেন। পরে সেখানে ধস্তাধস্তিতে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সহ-সমন্বয়কদের একটি পক্ষের দাবি আবরারকে মারধর করা হয়েছে। এদিকে আবরারকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিবেচনায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠান।
এদিকে আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত সম্বোধন ও কলেজে থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে ওয়াসিফের বিরুদ্ধে। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে আবরারের অংশ নেওয়ার বেশকিছু ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে আন্দোলনকারীরা তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশয় পোষণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অভিযোগ তোলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সমন্বয়কদের একটি পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন আবরার এবং ক্যাম্পাসে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করেন। এ নিয়ে অন্যান্য সমন্বয়করা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের কিছু সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শহিদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করার অভিযোগ তোলেন। তবে অন্য পক্ষের দাবি জুলাই অভ্যুত্থানে ওয়াসিফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
রাত ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের ২টি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে তা হাতাহাতির পর্যায়ে গড়ায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম উভয় পক্ষকে শান্ত করেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেন তিনি। এরপর প্রক্টর অফিসে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় এবং বুধবার সকালে আলোচনা শেষ হয়। এদিকে ওই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সহ-সমন্বয়ক তানভির মন্ডল বলেন, আমাদের মাঝে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করছে। আমরা এই ঘটনার তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচার চাই এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শিক্ষার্থীদেরকে ধৈর্য ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি। এছাড়া সকলের মাঝে যাতে অনৈক্য দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে আহ্বান জানাচ্ছি।
সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ওয়াসিফকে হল থেকে নামা না নামানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন আমি ও আমার সহযোদ্ধারা সেখানে গিয়ে তাকে ইবি মেডিকেলে পাঠানো হয়। এসময় আমাকে হেনস্তা করা হলে আমরা ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেই। এসময় আরও একটি পক্ষ সেখানে যাওয়ার পর বিরূপ মন্তব্য করা হলে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশ্বস্ত করলে আমরা সেখান থেকে প্রক্টরিয়াল অফিসে বসে আলোচনা করি। আমি আশাবাদী সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার হবে।
চিকিৎসা কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পারভেজ হাসান বলেন, তার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা ধারণা করছি তার শ্বাসনালিতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে সে সুস্থই হয়ে গিয়েছিল। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিল। এসময় রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং বাইরে থেকে আবার তার উপর আক্রমণ হতে পারে এমন কথা শুনে তার নিরাপত্তার কথাসহ যাবতীয় বিষয় চিন্তা করে তাকে কুষ্টিয়ায় পাঠিয়েছি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ.টি.এম মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের হলে ছেলেটার অ্যাটাচমেন্ট নেই তাই আমরা তাকে বললাম যে তুমি তোমার হলে চলে যাও। পরশুদিন আমি ওর রুমমেটকে বলেছিলাম ও যাতে রুমে এসে না থাকে, যেহেতু ওর বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এটা জানার পরেও আমার কথা অমান্য করে সে হলে এসে থাকছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে উসকে দিচ্ছে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাতে যারা ওকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিল তারাও আমার সাথে কথা বলে যায়নি। এটা তো হল প্রশাসনের দায়িত্ব। দুই পক্ষকেই আমি মেনে নিতে পারছি না।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরে আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, প্রক্টরকে বলেছি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।