হোম আন্তর্জাতিক আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 201 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক: আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আদিকাল থেকেই নারীর ন্যায্য অধিকার আদায়ের দিন, লড়াইয়ের দিন। পথপরিক্রমায় নারীর অর্জন অনেক, কিন্তু তা নারীকে আদায় করে নিতে হয়েছে। এখনো নারীর সিদ্ধান্তের বিষয়ে বড়ো কোনো যোগ্য পদ দিতে হাজারবার ভাবা হয়।

গত দুই দশকে নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়লেও তার কোনো প্রতিফলন নেই কর্মক্ষেত্রে। এখনো দাবি উঠতে শোনা যায় মেয়েদের পঞ্চম শ্রেণির বেশি লেখাপড়ার দরকার নেই। সরকার এ ধরনের মন্তব্যের যখন কঠোর জবাব দেয় না তখন স্বভাবত মনে করা হয় নারীরা দুর্বল, তাদের নির্যাতন করাই যায়। সমাজেও নারীর ওপর বাড়তে থাকে সহিংসতা।

চলতি বছরের গত দুই মাসে ধর্ষণের শিক্ষার হয়েছে ৮০ জন নারী, গণধর্ষণের শিকার ২৪ ও ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৯ জনকে। আর গত বছরে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হন ৪ হাজার ৬৪২ জন। ধর্ষণের শিকার হন ১ হাজার ৩৭০ জন, গণধর্ষণের শিকার ১৩৭, আর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার ৭৭ জন নারী শিশু। (১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এ তথ্য প্রকাশ করে)। তাই নারীর কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, সমঅধিকার আর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের দাবি প্রাসঙ্গিক।

বাংলাদেশে নারীর অর্জন অনেক। এজন্য সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে নারীর এগিয়ে চলার সুযোগ ও অধিকার অর্জিত হয়েছে। তবে বৈষম্যগুলোও আছে এবং এ ক্ষেত্রে নারীর ওপর সহিংসতা একটি বড়ো বাধা বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। একই কাজে নারীর আয় এবং পুরুষের আয়ের বৈষম্য আছে। আছে মানসিকতা বদলানোর একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ। নারীর প্রতি সমতার চ্যালেঞ্জ এখনো সবখানেই। পরিবার, সমাজ, সম্পদ, দক্ষতা, উচ্চশিক্ষা, জীবিকা, রাজনৈতিক ক্ষমতা, অবস্থানগত ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের নারীরা এখনো পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে। নারী-পুরুষের সমান সুযোগ, অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এখনো সমাজের বড়ো চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর কম অংশগ্রহণ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বিভিন্ন অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। সুশাসনের অভাব এর বড়ো কারণ। সরকারকে এই দিকটায় নজর দিতে হবে। কেননা সার্বিক সুশাসন শুধু নারীর অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে না, উন্নয়নের জন্যও এটি অপরিহার্য।

সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’—ডব্লি­উইএফ এর বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতার দিক দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সব দেশের ওপরে স্থান পায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের সাবেক শিক্ষক জঁ দ্রেজ তার ‘ঝোলাওয়ালা অর্থনীতি ও কাণ্ডজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশ’ বন্দনায় লিখেছেন—‘সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভারত থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। লিঙ্গবৈষম্যের অন্যান্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের চেয়ে ভালো। এমনকি কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণেও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।’ এমনকি নারীর কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

২০১১ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষার হার ছিল ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ৭০ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়ায়। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীর অগ্রগতি ছিল ৬২ শতাংশের বেশি যা ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ৭১ শতাংশে।

নারীর অগ্রগতির সঙ্গে দেশে দিন দিন বেড়েছে নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ। ২০০৯-১০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বাজেটে ছিল ২৭ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সামাজিক অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে হলে নারীর ওপর থেকে সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে। আর এ জন্য চাই সমতাভিত্তিক সমাজ। কারণ সহিংসতা নারীর অর্জনগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আর তার জন্য দরকার রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা বলেন, নারীর সার্বিক ক্ষমতায়ন, জাতীয় ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, শ্রম বাজারে প্রবেশগম্যতা বাড়ানো এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারীরা রাজনীতি, প্রশাসন, বিচারবিভাগ, চিকিত্সা, প্রকৌশল, সামরিক বাহিনী, খেলাধুলাসহ উন্নয়নের সর্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে।

দেশের এমন পরিস্থিতিতে আজ ৮ মার্চ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২০। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছরের মতো যথাযথ মর্যাদায় পালিত হবে দিবসটি। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার’। হ্যাসট্যাগ ‘ইচ ফর ইক্যুয়াল’, বাংলায় ‘সবার জন্য সমতা’। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠান, দৈনিক পত্রিকায় ক্রোড়পত্র, টেলিভিশনে টকশোর আয়োজন করা হয়েছে।

দিবসের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশেষভাবে তাত্পর্যপূর্ণ। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন। একই সাথে দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হবে। জাতীয় পর্যায়ে পাঁচ জন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করবে। জাতীয় প্রেসক্লাব নারী দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

আগামী ১৬ থেকে ১৮ মার্চ দেশ জুড়ে তিন দিনব্যাপী ‘নারী উন্নয়ন মেলা’র আয়োজন করা হয়েছে।

সূত্র-ইত্তেফাক

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন