হোম অর্থ ও বাণিজ্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির তুলনা

বাণিজ্য ডেস্ক:

যাদের সুঁই সুতার সেলাইয়ে গাঁথা হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প-উপাখ্যান, সেই তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হলো পাঁচ বছর পর। এই সময় অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পোশাক শ্রমিকরা কেমন মজুরি পাচ্ছেন?

কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ডলার সমান যদি ১১১ টাকা ধরা হয়, তাহলে মার্কিন ডলারে এই হিসাব দাঁড়ায় ১১২ ডলারের বেশি।

গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কারখানা মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মজুরি বোর্ডের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরি ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। আর রোববার (১২ নভেম্বর) গেজেট প্রকাশ করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

যেখানে আগের ৮ হাজার টাকা থেকে নূন্যতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করার পাশাপাশি তাদের (শ্রমিক) জন্য বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) সুবিধা রাখা হয়েছে।

পাশাপাশি বেতন গ্রেড ৭টি থেকে কমিয়ে ৫টি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকরা মোট বেতনের ৬৩ শতাংশ পাবেন বেসিক হিসাবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি পরিবার পাবে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড।

নতুন বেতন কাঠামো ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

দেশের শ্রমিকদের মাসে ১২ হাজার ৫০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি দিতে রাজি হয়েছে মালিকপক্ষ। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের শ্রমিকদের কতটা মজুরি দেয়?

নেদারল্যান্ডসের বিটুবি ফ্যাশন প্ল্যাটফর্ম ফ্যাশন ইউনাইটেড এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আগের ৬৮ ডলার থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১১৪ মার্কিন ডলার করেছে। প্রথম দেখায় হয়তো মনে হবে, শ্রমিকদের মজুরি বিপুল পরিমাণ বাড়িয়েছে সরকার। কারণ মজুরি বাড়ানো হয়েছে ৬৫ শতাংশ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই পরিমাণ বাড়ানো সত্ত্বেও বিশ্বের অন্যান্য পোশাক উৎপাদনকারী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম।

প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশের শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি তুলে ধরা হয়েছে। সে অনুসারে, কম্বোডিয়া তাদের পোশাক শ্রমিকদের মাসে ন্যূনতম ২০০ মার্কিন ডলার মজুরি দেয়। এরপরেই রয়েছে ভিয়েতনাম। তারা পোশাক শ্রমিকদের প্রতি মাসে ১৯২ ডলার ন্যূনতম মজুরি দিয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত গার্মেন্টস শ্রমিকদের মাসে ন্যূনতম ১৬৫ ডলার মজুরি দিয়ে থাকে। আর বিশ্বের শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ চীন তাদের গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি মাসে ন্যূনতম মজুরি দেয় ১৬১ ডলার।

এক্ষেত্রে পাকিস্তান তাদের তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দিচ্ছে ১১০ ডলার; যা বাংলাদেশের শ্রমিকদের নতুন ন্যূনতম মজুরি থেকে কম।

ফ্যাশন ইউনাইটেডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি অন্যান্য তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোকে মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়নি, বরং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই বর্ধিত মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের দরিদ্রতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। ফলে তারা ঋণ নিতে বাধ্য হবেন। পাশাপাশি তাদের সন্তানরা স্কুল থেকে ঝরে পড়তে বাধ্য হবে।

চীনের পর বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ। এ খাতে দেশের ৪ দশমিক ৪ মিলিয়নেরও বেশি কর্মী কাজ করেন, যার ৭০ শতাংশই নারী। এছাড়া দেশের মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে আর এটি দেশের জিডিপিতে ১১ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখছে।

২ নভেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রফতানি আয় ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৮৩ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলারে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম।

তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের মধ্যে ৮ হাজার ৬৭৬ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ডলার এসেছে নিটওয়্যার রফতানি থেকে, যা ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া ৬ হাজার ১০৬ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার এসেছে ওভেন পোশাক রফতানি থেকে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য মতে, ২০২২ সালে পোশাক রফতানি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে শীর্ষ স্থানে থাকা চীন রফতানি করেছে ১৮২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাতা ভিয়েতনাম ৩৫ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন