হোম জাতীয় সেন্ট্রাল হসপিটালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ

জাতীয় ডেস্ক:

ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং প্রসূতির মৃত্যুঝুঁকির ঘটনায় রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হসপিটালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও বলা হয়েছে।

মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসাজনিত অভিযাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত পরিদর্শন টিম শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়।

এ টিমের নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. মো. দাউদ আদনান ও অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার উপ-পরিচালক ডা. মঈনুল আহসান।

পরিদর্শন টিমের নির্দেশনাগুলো হলো:

১. ডা. সংযুক্তা সাহা স্বাস্থ্য অধিদফতরের লিখিত অনুমোদন ছাড়া পরবর্তীতে সেন্ট্রাল হসপিটালে কোনো বিশেষজ্ঞ সেবা দিতে পারবেন না।

২. আইসিইউ ও জরুরি সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

৩. মাহবুবা রহমান আঁখির পরিবারের কাছ থেকে গৃহীত চিকিৎসা বাবদ সব খরচ এবং চিকিৎসাজনিত যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।

৪. আঁখির চিকিৎসায় জড়িত সব চিকিৎসকের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বিএমডিসিতে পাঠাতে হবে। বিএমডিসি থেকে চিকিৎসকের নিবন্ধন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

৫. আদালতে চলমান মামলায় অভিযুক্ত ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনার যাবতীয় খরচ সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বহন করবে।

৬. ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নিষ্পন্ন করতে হবে।

৭. অভিযোগ সংক্রান্ত সব কাগজপত্রাদি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় করতে সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চিকিৎসক শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী জানান, গত শুক্রবার (৯ জুন) রাতে প্রসব ব্যথা উঠলে স্ত্রী মাহবুবা রহমান আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময়ে সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন।

ইয়াকুব আলী আরও জানান, তার স্ত্রীকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার পরও সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ তখনও জানায় তিনি আছেন এবং চেষ্টা চালাচ্ছেন। পরে জানা যায়, ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না এবং তারা রোগীর কোনোরকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন। পরে আঁখি সেন্সলেস হয়ে যায়, এমন অবস্থায় ডেলিভারি করলে নবজাতকের হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় সে। পরে আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাব এইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন