হোম অর্থ ও বাণিজ্য রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২ : ফ্ল্যাটের দাম বাড়ায় ব্যাংক ঋণে আগ্রহ, দূষণ কমাতে পরিবেশবান্ধব ইট

বাণিজ্য ডেস্ক :

এবারের রিহ্যাব ফেয়ারে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের দাম কিছুটা বেশিই মনে হয়েছে আগ্রহী দর্শনার্থীদের কাছে। উত্তরা থেকে আসা মধ্যবয়সী আশরাফ সাহেব খুঁজছেন ১৫০০ বর্গফুটের মধ্যে কমপক্ষে তিন বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট। জানালেন, উত্তরায় আট হাজার টাকা প্রতি বর্গফুটের নিচে ভালো কোনো ফ্ল্যাট তার চোখে পড়েনি এবারের মেলায়। সে হিসাবে পছন্দসই ফ্ল্যাট কিনতে দলিল ও অন্যান্য খরচসহ দাম পড়ে যাবে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার ওপর, যা তার বাজেটের থেকে অনেক বেশি।

অথচ গত বছরও ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার মধ্যে উত্তরার ভালো লোকেশনে ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট পাওয়া যাচ্ছিল বলে জানান তিনি। তবে প্রস্তাবিত নতুন ড্যাপের কারণে ফ্ল্যাটের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এ বছরই স্বপ্নের ফ্ল্যাটটি কিনতে চান তিনি। এ জন্য প্রয়োজনে ব্যাংক ঋণ নেয়ার কথাও জানান তিনি।

আশরাফ সাহেবের মতো ক্রেতাদের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই এবারের রিহ্যাব ফেয়ারে স্টল সাজিয়ে বসে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাদের স্টলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন গৃহ নির্মাণ সংক্রান্ত নানা ধরনের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধার বিষয়টি।

আগ্রহী অনেক দর্শনার্থীকেই দেখা গেল বিভিন্ন আবাসন কোম্পানির স্টলের পাশাপাশি এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোতে ঢু দিতে।

মেলায় স্টল দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক বা এমটিবি। সেখানে থাকা ব্যাংকের প্রতিনিধিরা জানান, ফ্ল্যাট কিনতে কিংবা বাড়ি করতে ৫০ লাখথেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছেন তারা। এক থেকে ২৫ বছরের মধ্যে কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন গ্রাহকরা। সম্পদের মোট মূল্যের সত্তর শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেন তারা।

তবে এমটিবির বড় বৈশিষ্ট্য হলো, চাকরিজীবীদের জন্য ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট কেনার সুবিধা। সে ক্ষেত্রে গৃহঋণ পেতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বেসরকারি চাকরিজীবীদের ৪০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ন্যূনতম মাসিক আয় নির্ধারণ করেছেন তারা। এমটিবির ঋণের সুদের হার সাড়ে আট শতাংশ।

ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার অনেক দর্শনার্থীই ঋণের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান এমটিবির স্টলে থাকা প্রতিনিধি।

পছন্দের বাড়ি নির্মাণের এক আবশ্যিক উপকরণ টাইলস কিংবা স্যানিটারি ওয়্যার। এবারের মেলায় ঢোকার ঠিক মুখেই বিশাল স্টল দেখা যায় আরএকে সিরামিসকের। সেখানে থাকা প্রতিনিধিরা জানান, এবারের মেলায় গ্রাহকদের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন তারা।

এ বছর সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইনের বেশ কিছু টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার পণ্য নিয়ে এসেছে আরএকে সিরামিকস। বিশেষ করে বাথরুম ফিটিংয়ে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বেশ কিছু স্যানিটার ওয়্যার পণ্য।

মেলায় ইলেকট্রকওয়্যার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকেও দেখা গেল স্টল সাজিয়ে বসে থাকতে। বাসাবাড়ি ও ভবনের বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কেবল ও তার নিয়ে স্টল দিয়েছে বিজলি, বিআরবি ক্যাবলস-এর মতো প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল-এর ব্যাপারে খোঁজ নিতে দেখা গেল বিভিন্ন আবাসন ও রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীদের।

সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের আবাসন খাতেও। গ্যাস সংকটের কারণে রাজধানীর নতুন গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে গ্যাস সংযোগ প্রায় মিলছেই না। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যেও দেখা গেল এ নিয়ে উৎকণ্ঠা। তাদের জন্য এলপিজির বিভিন্ন সমাধান নিয়ে স্টল দিয়েছে এলপি গ্যাস কোম্পানিগুলোও।

বাড্ডা থেকে আসা সাজ্জাদ নামের এক গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলো জেএমআই এলপিজির স্টলের সামনে। জানালেন, এলপি গ্যাসের ওয়ানস্টপ সার্ভিস খুঁজছেন তিনি, যেন সিলিন্ডার পাওয়া না-পাওয়া কিংবা নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তায় না পড়তে হয়। তার সামনে নিজেদের এলপিজির নানা বিষয় তুলে ধরেন জেএমআই-এর স্টলে থাকা প্রতিনিধিরা।

অ্যাপার্টমেন্ট কিংবা বহুতল ভবনে কেন্দ্রীয়ভাবে নিরবচ্ছিন্ন এলপিজি সরবরাহের জন্য এলপিজি রেটিকুলেটেড সিস্টেম নামের একটি ব্যবস্থার কথা জানান জেএমআই-এর প্রতিনিধি। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ভবনের প্রতিটি ইউনিটে এলপি গ্যাস পৌঁছে যাবে প্রচলিত তিতাস গ্যাসের মতোই। গ্যাসের অপচয় কম হওয়ার পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে নিরাপত্তাও অনেক বেশি বলে দাবি করেন তিনি।

ইটের স্টলও দেখা গেল মেলায়। স্টোন ব্রিকস নামের একটি কোম্পানি মেলায় এসেছে পরিবেশবান্ধব ইট নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি জানান, তাদের ইট পোড়াতে পরিবেশ দূষণ হয় না বললেই চলে। প্রচলিত ইটভাটার মতো তাদের ইটভাটায় নেই কোনো চিমনি। পাশাপাশি তাদের ইটে ব্যবহার হয় সম্পূর্ণ ন্যাচারাল ক্লে, যেখানে ব্যবহার হয় না কোনো রাসায়নিকের। তা ছাড়া ইটের সাইজেও সম্পূর্ণভাবে বিএসটিআই-এর দেয়া মাপ অনুসরণ করা হয় তাদের পণ্যে। প্রতিটি ইটে রয়েছে বিএসটিআই-এর ছাপ। মেট্রোরেল, ঢাকা-মাওয়া ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে স্টোন ব্রিকস-এর ইট ব্যবহার হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি।

২০০১ সাল থেকে ঢাকায় আবাসন মেলার আয়োজন শুরু করে রিহ্যাব। এ বছর ছিল মেলার ২২তম আয়োজন। গত বুধবার রাজধানীর আগারগাঁয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার উদ্বোধন করেন এলজিআরডিমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

রোববার ছিল মেলার শেষ দিন। তবে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ৯টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেট্রোরেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান থাকায় নিরাপত্তার কারণে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগেই শেষ হয় মেলা।

এবারের মেলায় ছিল ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের ১৮১টি স্টল। রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এবার অংশ নেয় মেলায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন