স্পোর্টস ডেস্ক:
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে বিপিএল, সবখানেই রান পাচ্ছেন ৩৮ বছর বয়সী ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে দীর্ঘদিন তিনি উপেক্ষিত থেকেছেন। যদিও সেটিকে উপেক্ষা বলতে নারাজ বিসিবির নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক। তার মতে, তরুণদের সুযোগ দেয়ার জন্যই রিয়াদকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে জাতীয় দলের সাবেক এই ক্রিকেটার সময় সংবাদকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার শেষ পর্ব তুলে ধরা হলো আজ।
সাংবাদিক: গত নিউজিল্যান্ড সিরিজে সিনিয়র কোনো ক্রিকেটার সেভাবে ছিলেন না। দলটা কি গোছানো ছিল?
আব্দুর রাজ্জাক: নিয়মের বাইরে কখনও কিছু হয় না। খুব স্বাভাবিকভাবে একটি গ্রুপ চলে যাবে, আরেকটি গ্রুপ এসে ওই জায়গাটা দখল করবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা পিছনের গ্রুপ আছে, তাদেরকে জাতীয় দলের জন্য সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে কি না। ওরা যদি নিজেদের প্রস্তুত করে আসে, তাহলে আমাদের কাজ কিন্তু বড় কিছু না। আমাদের কাজ হচ্ছে, জায়গা তৈরি করে দেয়া। একজনের জায়গা তৈরি হয়েছে, তাকে সেটি দিয়ে দেয়া। আর মূল কাজটা কিন্তু খেলোয়াড়দের। নিজেকে সে কীভাবে তৈরি করে নিয়ে আসছে, সেটাই মূল বিষয়। আবার ভালো খেলোয়াড় যদি না পান সেক্ষেত্রে অনেক সময় এমন হয় যে, কে কম খারাপ খেলছে তাকে নিতে হয়। দল তো নির্বাচন করতে হবে! এই জিনিসটা শুধু যে আমাদের দেশে হয়, তা না। বাইরের দেশেও এটা হয়।
সাংবাদিক: ২০২৩ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে নেয়ার বিষয়ে অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। চাপে পড়ে কি তাকে দলে নেয়া হয়েছিল?
আব্দুর রাজ্জাক: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে আমরা কখনও বাদ দিইনি। গণমাধ্যমের মাধ্যমে শুনেছি, রিয়াদ নাকি বাদ হয়ে গেছে। সেটা একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার ছিল। রিয়াদ কিন্তু প্রমাণিত খেলোয়াড়। আমি জানি না কারা এমন ঘটনা তৈরি করেছে। আমাদের তো অন্য খেলোয়াড়দের দেখতে হবে। যদি আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলোয়াড়দের পরীক্ষা না করতে পারি, তাহলে আর কখন-কোথায় করব। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের বিপক্ষে চেষ্টা করব? একজন তরুণ খেলোয়াড়কে কিন্তু তাদের বিপক্ষে পরীক্ষা করতে পারি না। সুতরাং আমাদের পরিকল্পনার ওই জায়গা থেকেই রিয়াদকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল। পরে কিন্তু আবার ঠিকই তাকে নেয়া হয়েছে। আমার নিজের কাছেই ফোন এসেছে, রিয়াদ নাকি বাদ? তখন আমি প্রশ্ন করেছি, আপনি কি বাদ দিয়ে দিয়েছেন? অনেক সময় এই জিনিসগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। তাতে অনেকসময় এগুলো নিয়ে কথা হয়। এমনকি রিয়াদের কাছেও মেসেজ দেয়া হয়েছে, রিয়াদ বাদ, রিয়াদ পুরোপুরি শেষ। তাহলে রিয়াদ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গেল কী করে? আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেট প্রচন্ড রকমের পছন্দ করে। তাদের ওই জায়গা থেকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এই পছন্দের কারণে মানুষ বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করেছে যে, এটা কেন হবে, ওটা কেন হবে! কেউ না কেউ এটা বাজেভাবে উপস্থাপন করার কারণে এটা হয়েছে।
সাংবাদিক: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যদি লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিমদের ব্যাটিং স্তম্ভ ধরা হয়, তাহলে তারা বিপিএলে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করছেন এবং তারা কাঙ্ক্ষিত ফর্মে রয়েছেন কি না? তাদের নিয়ে কি দল নির্বাচন করা হবে?
আব্দুর রাজ্জাক: দল নিয়ে আমরা এখনও ওভাবে কাউকে বিবেচনা করিনি। তবে যারা এখন খেলার মধ্যে আছে বা খেলছে সবাইকেই বিশ্বকাপের জন্য বিবেচনা করা হবে। দিনশেষে পারফর্ম যেমনই হোক আমাদের কিন্তু দল করা লাগবে। তবে সেই জায়গা থেকে আশা করি, সকলেই খুব ভালো খেলুক। বিপিএলে ভালো খেলতে পারলে আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়ে তারা ভালো খেলতে পারবে। বিপিএলে সব খেলোয়াড়রা খেলছে। এটা দেখাই যাচ্ছে, কারা কেমন পারফর্ম করছে। এটা সবার জন্যই উন্মুক্ত। দল নির্বাচনের ব্যাপারটা খুবই উন্মুক্ত। একটা থেকে দুইটা জায়গায় সিদ্ধান্তের ব্যাপার হয়। কিন্তু এখানে পরিকল্পনাটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আগে বুঝতাম না। এখানে এসে যেটা বুঝলাম, মূল বিষয়টা হচ্ছে পরিকল্পনা। একটা ছেলেকে নিলেন, তাকে দিয়ে কতদিন খেলাতে পারবেন। এই সময়ে গিয়ে সে ভালো খেলবে এবং আদৌ ততদিন সে খেলতে পারবে কি না। আর মূল বিষয় হচ্ছে, যে ভালো খেলবে সেই মূল দলে জায়গা পাবে। আমরা কোনো বিকল্প চিন্তা করি না। যে খারাপ খেলবে স্বাভাবিকভাবেই তাকে বাদ দেয়া হবে।
আব্দুর রাজ্জাক: নির্বাচকদের কাজ মূলত একই। তবে এখানে প্রধান যে নির্বাচক থাকে, তার আলাদা একটা বলার জায়গা থাকে। দল তো সবাই মিলেই করা হয়। তারপরও যদি প্রধান নির্বাচক মনে করেন যে, এই সিদ্ধান্তটা একটু অন্যরকম হলে ভালো হতো, তাহলে উনি সেটা করতে পারেন।