আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নানাবিধ ইস্যুতে সরগরম বিশ্ব রাজনীতির মাঠ। তবে বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের বিষয়টি। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই বিশ্বনেতার সাক্ষাৎ নিয়ে যেমন কৌতূহলের শেষ নেই, তেমনি এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণও। তবে এর মধ্যেই ঘুরেফিরে উঠে আসছে আরও একটি প্রশ্ন: মোদি ও বাইডেনের বৈঠকে কি বাংলাদেশ বিষয়েও আলোচনা হবে?
যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিন দিনব্যাপী ঐতিহাসিক এই সফরে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকে মোদি ও বাইডেন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বেশ কিছু চুক্তির বিষয়ে ঘোষণা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, চুক্তির পাশাপাশি এই দুই বিশ্বনেতা আলোচনা করতে পারেন বাংলাদেশ নিয়েও।
বিশিষ্ট ভারতীয় সাংবাদিক ভারত ভূষণ চলতি সপ্তাহে একটি কলাম লিখেছেন। শিরোনাম, ‘ইউএস-চায়না পাওয়ার প্লে ইন বাংলাদেশ’। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, ‘বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শক্তির খেলা’। কলামের সারকথা, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের যে লড়াই চলছে, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে নতুন ‘যুদ্ধক্ষেত্র’।
জাতীয় স্বার্থে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে; নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশগুলোকে ঘিরে এমন কোনো উদ্যোগ নেয়া উচিত হবে না বলে মনে করে ভারত সরকার। সম্প্রতি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ মনোভাবের কথা জানান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল।
অনেক বিশ্লেষকের মতে, ভারত মহাসাগরে আধিপত্য বিস্তারে চীনের সব ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ছাড়াও হিমালয়ের অন্য দেশগুলোতেও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে বেইজিং। এসব বিষয় ভারতের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নয়াদিল্লি মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড প্রতিবেশী বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশে ভারতের অনেক বেশি কৌশলগত অংশীদারত্ব রয়েছে। এর মধ্যে নিজেদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণ, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ট্রানজিট এবং শিলিগুড়ি করিডোরকে রক্ষা করে বাকি অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্রকাণ্ড এখনও ভারতের কাছে দগদগে ক্ষত হিসেবেই আছে। তাই বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতার রদবদলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা ভারতের। দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো তাই বলছে, যুক্ত্ররাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতি নিয়ে মোদি খোলামেলাই আলোচনা করবেন জো বাইডেনের সঙ্গে।
মোদি ও বাইডেনের আলোচনায় সত্যিই বাংলাদেশ থাকছে কি না, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২২ জুন পর্যন্ত।