রাজনীতি ডেস্ক:
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, বর্তমান সরকার নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছেন সারা পৃথিবীতে তা দৃশ্যমান। দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। দেশের উন্নয়ন তাদের সহ্য হচ্ছে না। দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে। যারা ভিক্ষার মনোবৃত্তি নিয়ে দেশ চালাতে চায় তাদের পুনরায় ক্ষমতায় না আনার আহ্বান জানান তিনি।
ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও জনপ্রিয় জাতসমূহ সম্প্রসারণ এবং বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলে বিনা উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও জনপ্রিয় জাতসমূহ সম্প্রসারণ এবং শস্যবিন্যাসে তেল ফসলের অন্তর্ভুক্তকরণ শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বাঞ্চাল করা, ১৫ সালে একটানা ৯০দিন হরতাল, অবরোধ করেছে। শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এরচেয়ে বিভৎস, পৈচাশিক আর কী হতে পারে। চরম বর্বরতা। গণতন্ত্রের নামে অধিকারের নামে এগুলো করা হচ্ছে। এটা কি গণতন্ত্র? রাত তিনটার সময় একজন নারী জরুরি কাজে গাড়িতে এসেছে তাকেসহ গাড়ির লোকজনকে গাড়িতে তালা দিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে, বারবার হুমকি দিচ্ছে, বাংলাদেশকে অচল করে দেবে, ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবে। একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। সারা দেশকে অস্থিতিশীলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এটা দেশের জন্য, অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
মন্ত্রী উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, এ সকল বিষয়ে আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। অবশ্যই আপনারা সঠিক কথাটা মানুষের মাঝে তুলে ধরবেন। দেশটা যে আজকে উন্নয়নের শিখরে উঠেছে, সারা বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের জন্য রোল মডেল। এ জাতিকে কি আমরা ভিক্ষুকের জাতি রাখব, আবার কি খাদ্য ভিক্ষার জন্য সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াব। নাকি আমরা বাংলাদেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত করবো?
যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাও আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করেন, আপনারা আপনাদের মুখটা আয়নাতে দেখেন যে, বাংলাদেশে কীভাবে মঙ্গা হয়েছে, কীভাবে উত্তরাঞ্চলের নদী ভাঙন এলাকায় মানুষ না খেয়ে মারা গেছে। আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, আমার কাছে সকল তথ্য রয়েছে। মঙ্গা এলাকায় প্রতিদিন মানুষ না খেয়ে মারা যেত। তখন কী যে তাদের কষ্ট ছিল, আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছি, অভুক্ত মানুষগুলো বলেছে কেন আমাদের ৫ কেজি ১০ কেজি চাল দেন। দুই দিন খাবো তারপর কী হবে। তার চেয়ে ভালো এক ফোঁটা বিষ দেন খেয়ে জ্বালা মিটিয়ে ফেলি।
তিনি বলেন, যারা ভিক্ষার মনোবৃত্তি নিয়ে দেশ চালায় তাদের কি আবার এনে দেশটাকে কি একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করবেন, একটা লজ্জার রাষ্ট্রে পরিণত করবেন। আপনাদের সচেতন হতে হবে। যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে, এটাকে অবশ্যই সচেতনতার সঙ্গে প্রতিরোধ করতে হবে। আপনারা মানুষের মাঝে তুলে ধরবেন কীভাবে আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করলাম, ফোর লেন সড়কসহ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব ফসল নিজেরাই উৎপাদন করতে হবে। বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। বাংলাদেশে যে আলু হয়, এখন হয় ৩০ টন, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে যে জাত আছে তাতে ৪৫ থেকে ৫০ টন উৎপাদন সম্ভব। কী কারণে আমাদের ঘাটতি হবে। গত বছর আলু বিক্রি করতে পারে নাই, তারা এবছর চাষাবাদ করে নাই ঘাটতি হয়ে গেছে। কীভাবে সিন্ডিকেট করে কোল্ডস্টোরেজগুলো মানুষের টাকা চুষে নিচ্ছে। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি, অনেক চেষ্টা করছি, কিচ্ছু করতে পারছি না। আমরা বেশি চাপ দিলে তারা বাজার থেকে আলু তুলে নিয়ে যায়। দেশে আলুর উদ্বৃত্ত উৎপাদন রয়েছে।’
কৃষি মন্ত্রী আরও বলেন, আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনতে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপিত পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার সফলতা পেয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্থানে এই সংরক্ষণাগার স্থাপিত হলে ভারত বা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।
তিনি বলেন, দেশে একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্যই সেই নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগকে আবারও নির্বাচিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, গত জুলাই থেকে দেশে চাল আমদানি করতে হয়নি বরং চালের দাম এখন নিম্নমুখী। যা সম্ভব হয়েছে উন্নত জাত উদ্ভাবন, কৃষক ও কৃষি বিভাগ এবং সরকারের আধুনিক কৃষিনীতির কারণে। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশে উৎপাদিত সরিষা তেল ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
কর্মশালায় বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বিনা ধান, লেবু, চিনা বাদাম, সরিষা, তিল ও মুগ ডালের নতুন জাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড.মির্জা মোফাজ্জেল ইসলাম, বিএআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বিএডিসি’র চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস প্রমুখ।
কর্মশালায় বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ও কৃষি উদ্যোক্তারা উপস্থিত ছিলেন।