হোম অর্থ ও বাণিজ্য বৈশ্বিক কানেক্টিভিটি, স্মার্টফোনে বিপ্লব আনছে বেইদু

বাণিজ্য ডেস্ক:

চীনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রযাত্রায় বড় ভূমিকা রাখছে দেশটির বেইদু নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম। কেননা এটি ব্যবহারের পরিসর ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাপ এবং নেভিগেশন অ্যাপগুলোয় বেইদু ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের নির্ভুল অবস্থান পরিষেবা দৈনিক ৩৬০ বিলিয়ন বার ব্যবহার করা হয়।

এমনকি চলতি বছরে বাজারে আসা নতুন চীনা স্মার্টফোনগুলোয় এটি একটি স্ট্যান্ডার্ড ফিচার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে; যা বর্তমানে ৩০০টিরও বেশি মোবাইল ফোনের মডেলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

যার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হতে পারে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে আনা ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনটি। সেটিই ছিল বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইট কানেক্টেড স্মার্টফোন। ওই মুঠোফোনটিতে বেইদু সিস্টেম সরাসরিভাবে সংযুক্ত করা হয়। ফলে ব্যবহারকারীরা কোনো গ্রাউন্ড কমিউনিকেশন সিগন্যাল ছাড়াই বার্তা আদান-প্রদান করতে পারেন।

চাইনিজ একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং ও চাইনিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের শিক্ষাবিদ লি ডেরেনের জানান, ‘মাত্র কয়েক সেকেন্ডে বেইদু সিস্টেম ব্যবহার করে স্যাটেলাইট তথ্য বের করা যায় এবং তা কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে পাঠানো যায়। যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিতে পরিণত করেছে।

তাছাড়া এরই মধ্যে বেইদু’র সঙ্গে সংযুক্ত ১০০ মিলিয়নেরও বেশি দেশীয়ভাবে উৎপাদিত চিপ বিক্রি হয়ে গেছে। বেইদু চিপের বিষয়ে সিংহুয়া স্যাটেলাইট ল্যাবেরেটরির পরিচালক লু মিংকুয়ান জানিয়েছেন, নতুন বেইদু চিপ উন্নত কর্মক্ষমতাসম্পন্ন। তাছাড়া এটি বিদ্যুতের খরচসহ অন্যান্য ব্যয় কমাতেও ভূমিকা রাখছে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ায় এটি একটি উন্নত বৈশ্বিক মানদণ্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন বেইদুকে একটি গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত দিয়েছে। এতে এটি জাতিসংঘের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ৪টি স্যাটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেমের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। বাকি ৩টি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস, রাশিয়ার গ্লোনাস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যালিলিও।

বিশ্বব্যাপী নিজেদের পরিসর আরও বাড়ানোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশের ব্যবহারকীরদের কাছেও পরিষেবা পৌঁছে দিতে চায় বেইদু। তাছাড়ার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইন্টারনেট, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) এবং ইন্টারনেট ও ভেহিক্যালসের (আইওভি) মতো উদীয়মান খাতে বেইদু ব্যবহার করা চীনের কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী পরিচালিত জিপিএসের ওপর নির্ভরতা কমাতে নিজস্ব নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করে চীন। ২০০০ সালে প্রথম বেইদু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হয়, তখন এর সক্ষমতা কেবল চীনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১২ সালে বেইদু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে দ্বিতীয় প্রজন্মের কৃত্রিম উপগ্রহ চালু করে চীন। ২০১৫ সালে এসে বৈশ্বিক পর্যায়ে সেবা দিতে বেইদু-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন