স্পোর্টস ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার প্রয়োজন এখনও ফুরোয়নি। সতীর্থ হিসেবে এখনও দিব্যি খেলে যাচ্ছেন ৪১ বছর বয়সী জেমস অ্যান্ডারসন। এছাড়া পরিসংখ্যান কিংবা পারফরম্যান্সেও কোনো ঘাটতি নেই। তবুও হুট করেই যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ডাকটা দিয়ে বসলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। তবে ছেলের এমন সিদ্ধান্তে হতাশ না হয়ে খুশিই হয়েছেন ব্রডের বাবা ক্রিস ব্রড।
ক্যারিয়ারের একদম শুরুর দিকে ৬ বলে ৬ ছক্কা খেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডের মালিক হয়েছিলেন ব্রড। তবে ব্যর্থতার সেই গ্লানি একদমই ছুঁতে পারেনি ব্রিটিশ এই ক্রিকেটারকে। গত ১৭ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রীতিমতো রাজত্ব করেছেন এই পেসার। ছয় ছক্কা খাওয়ার পর যখন ধারণা করা হচ্ছিল, অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার, সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৮০০’র বেশি উইকেট পাওয়া ব্রড টেস্টে ক্রিকেটেই নিয়েছেন ৬০২ উইকেট। গত কয়েক সিরিজেও নিয়মিতই আতঙ্ক ছড়িয়েছেন প্রতিপক্ষ শিবিরে। তবে ফর্ম থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেন ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। এবার ব্রডের সিদ্ধান্তে প্রতিক্রিয়া জানালেন তার বাবা এবং সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ক্রিস ব্রড।
স্টুয়ার্ট ব্রডের এমন আকস্মিক সিদ্ধান্তে হতাশ না হয়ে খুশিই হয়েছেন তার বাবা ক্রিস ব্রড। সাবেক এই ইংলিশ ক্রিকেটার মন্তব্য করেছেন, সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ছেলে। তিনি বলেন, ‘বলতেই হবে, এটা (অবসর গ্রহণ) একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমার জন্য বিষয়টা বলা যেমন সহজ, তার (স্টুয়ার্ট ব্রড) জন্যেও তাই। তার কেবল মনে হয়েছে, সে ঠিক সময়ে ঠিক কাজটিই করছে।’
অ্যাশেজে অবসর গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘সে এই প্রতিযোগিতা ভালোবাসে আর ক্রিকেটকে বিদায় দেয়ার জন্য ইংল্যান্ডে অ্যাশেজের মতো বড় কোনো উপলক্ষ্য হয় না।’
ওভালে শেষ টেস্ট খেলা প্রসঙ্গেও ইতিবাচক ক্রিস ব্রড, ‘আমার মনে হয় যদি ট্রেন্ট ব্রিজে একটা টেস্ট থাকতো, সে ওখানেই অবসর নিতে চাইতো। তবে, দিনশেষে ওভালে, মাঠভর্তি দর্শকদের সামনে, বিষয়টা দারুণ। ইংল্যান্ড ক্রিকেটে তার শুরুটাই হয়েছিল এখানে ২০০৯ সালে, যখন সে ৫ উইকেট পেয়েছিল। সেসময়ই ও বুঝতে পেরেছিল, ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে তার একটা ভবিষ্যত আছে।’
ইংল্যান্ডের হয়ে আশির দশকে ক্রিকেট খেলেছেন ক্রিস ব্রড। তবে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর ব্যাটার। ওপেনিং পজিশনে খেলেছেন লম্বা সময় ধরে। অবসরের পর থেকে আইসিসির ম্যাচ রেফারি হিসেবে কাজ করছেন এই ইংলিশম্যান।
এর আগে শনিবার (২৯ জুলাই) অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্রড। জানিয়েছেন, ওভাল টেস্টের শেষ দিনই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দিন হতে যাচ্ছে।
২০০৬ সালে কার্ডিফে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ব্রডের। এর দুই মাস পরেই ২০ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো সাদা জার্সি গায়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে নামেন।
সব মিলিয়ে ১৬৭ টেস্টে ২৭ গড়ে ৬০২ উইকেট শিকার করেছেন ব্রড। ২০ বার নিয়েছেন ইনিংসে পাঁচ উইকেট ও ৩ বার ম্যাচে ১০ উইকেট। ২০১৫ অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে নটিংহ্যামে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫ রানে ৮ উইকেট শিকার করেছিলেন ব্রড। এটিই তার সেরা বোলিং ফিগার। ব্যাট হাতেও টেস্টে বেশ সফল তিনি। টেস্টে ১ সেঞ্চুরি ও ১৩ অর্ধশতকসহ ১৮ গড়ে ৩৬৫৬ রানের মালিক ব্রড। টেস্ট বাদেও ১২১টি ওয়ানডেতে ১৭৮টি উইকেট শিকার করেছেন ব্রড। এছাড়া ৫৬টি-টোয়েন্টিতে ২২.৯৩ গড়ে ৬৫ উইকেট আছে তার ঝুলিতে।