হোম জাতীয় প্রতিমন্ত্রীর নৌকা ডুবিয়ে যেভাবে চমক দেখালেন ব্যারিস্টার সুমন

প্রতিমন্ত্রীর নৌকা ডুবিয়ে যেভাবে চমক দেখালেন ব্যারিস্টার সুমন

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 123 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

নানা চমক আর আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের নির্বাচন। হবিগঞ্জের ৪টি আসনের মধ্যে বড় চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। টানা দুবারের সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুব আলীকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয় লাভ করেন ব্যারিস্টার সুমন।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর বাড়ি মাধবপুর উপজেলার বানেশ্বর গ্রামে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য। এবারও দল তাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়। তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠে ছিলেন যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ সায়েদুল হক। তিনি এলাকায় ‘ব্যারিস্টার সুমন’ হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি চুনারুঘাট উপজেলার বড়াইল গ্রামে। তিনি ছাত্রলীগের পরে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এবার দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ সায়েদুল হক পেয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাহবুব আলী পান ৬৯ হাজার ৫৪৩ ভোট। অর্থাৎ, দুজনের ভোটের ব্যবধান প্রায় এক লাখ।

শুরু থেকেই এ আসনের নির্বাচন নিয়ে সারাদেশের মানুষ উদগ্রীব ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত সুমন চমক দেখাতে পারেন বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তারপরও এ আসনে যেহেতু ৭০ হাজারের অধিক চা শ্রমিকদের ভোট রয়েছে এবং স্বাধীনতার পর থেকে তারা যেহেতু নৌকায় ভোট দিয়ে আসছেন তাই তারা নৌকায় ভোট দিবেন এটা অনেকের ধারণা ছিল। যে কারণে নির্বাচনে বড় ভোটের ব্যবধান নাও হতে পারে বলে অনেকের ধারণা ছিল। কিন্তু আশঙ্কার কারণে ব্যারিস্টার সুমন গুরুত্ব দিয়েছে চা শ্রমিকদের ভোট টানতে। দিনরাত চা বাগানে বাগানে গণসংযোগ করে তিনি বুঝাতে চেয়েছেন তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নন, নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে। আর শেষ পর্যন্ত তিনি চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের ধারণা বদলাতে সক্ষম হয়েছেন। এবং চা শ্রমিকরা তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, শুরুতেই এ আসনের নির্বাচন ছিল সারাদেশে আলোচিত। এ আসনটিতে স্বাধীনতার পর থেকেই নৌকা বিজয়ী হয়ে আসছে। অনেক বছর পর নৌকার ভরাডুবি হয়েছে এ আসনে। নৌকার বিজয়ের ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক ৭০ হাজারের অধিক চা শ্রমিকের ভোট। বঙ্গবন্ধু তাদের ভোটের অধিকার দিয়েছেন তাই তারা সবসময় নৌকায় ভোট দিয়ে আসছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ব্যারিস্টার সুমন তাদেরকে নিজের দলে এনে চমক দেখিয়েছেন। সুমন শুরু থেকেই দুবারের সংসদ সদস্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে ভোটারদের কম গুরুত্ব দেয়া ও এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না করার অভিযোগ আনতে থাকেন। বিশেষ করে নৌকার ব্যাংক ভোট চা শ্রমিকদের তিনি বুঝাতে চেষ্টা করেছেন তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নন, নৌকার মাঝির বিরুদ্ধে। তার মূল টার্গেট ছিল চা শ্রমিকদের ভোট। দিনরাত তিনি প্রচারণা করেছেন নির্বাচনী এলাকার ২০টি চা বাগানে। চা শ্রমিকদের সন্তানদের তার ফুটবল একাডেমিতে খেলার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসব কারণে চা শ্রমিকরা এবার নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়ে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়ে তাকে বড় ব্যবধানে জয়ী করেছেন।

অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার তার কথাগুলোও সাধারণ মানুষ মন থেকে শুনেছে। নির্বাচনী প্রচার সভায় তিনি হাজার হাজার মানুষের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থীর বিভিন্ন দুর্বলতা নিয়ে কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে ভোটারদের মধ্যে সুমন একটি গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন বলেই বিশাল ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয় লাভ করেছেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহাদ উদ্দিন চৌধুরী শাহীন (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৪১৭ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল আমিন (ডাব) ৫৪০ ভোট, ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের আবু ছালেহ (মিনার) ভোট ১৭৩, বিএনএম এর মো. মুখলেছুর রহমান (নোঙ্গর) ৩৯৩ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো. আব্দুল মুমিন (চেয়ার) ৩৩৭ ভোট ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন (ছড়ি) ১৬৭ ভোট পেয়েছেন।

এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমি শুরু থেকেই বলছি আমি নৌকার বিরুদ্ধে নই। আমি নৌকার মাঝি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে। আমি ভোটারদের বুঝিয়েছি যে মাঝি নৌকা ডুবিয়ে দিবে তাকে পরিবর্তন করা দরকার। এছাড়া নৌকার প্রার্থী দুই টার্ম এমপি ও মন্ত্রী হয়েও তিনি এলাকার দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করেননি। তিনি ভেবেছেন এ আসনে চা শ্রমিকরাতো নৌকায় ভোট দিবেনই। তাই তিনি দাঁড়ালেই পাশ করবেন। এজন্য চা শ্রমিকদেরও তিনি কোনো উন্নয়ন করেননি। গত বছর চা শ্রমিকদের লাগাতার মজুরী বৃদ্ধির আন্দোলনে তিনি একবারের জন্য তাদের খোঁজ খবর নেননি।

তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চা শ্রমিকদের জন্য লাখ লাখ টাকার খাদ্য সরবরাহ করেছি। সব মিলিয়ে চুনারুঘাট-মাধবপুরের মানুষ তাকে পরিবর্তনের চিন্তা করেছে। এখন পাশ করে আমার ঋণ আরও বেড়ে গেছে। তবে আমি চা শ্রমিকদের উন্নয়ন তথা এ আসনের সার্বিক উন্নয়নে প্রাণপণ চেষ্টা করব। মানুষ যে আশা নিয়ে আমাকে ভোট দিয়েছে আমি তাদের আশা পূরণে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কাজ করে যাব।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন