হোম জাতীয় পদযাত্রা ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

জাতীয় ডেস্ক:

আন্দোলন আর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে চলতি সপ্তাহে ভোগান্তি বেড়েছে রাজধানীবাসীর। কর্মসূচি পালনে সড়ককে বেছে নেয়ায় যানজটে প্রায় স্থবির পয়ে পড়ে রাজধানী। সড়কে যান চলাচলে স্থবিরতার পাশাপাশি তীব্র গরমে কষ্ট বেড়েছে সাধারণ মানুষের।

সপ্তাহের শুরুতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন ট্রেইনি চিকিৎসকরা। এরপর প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষকদের আন্দোলন ও ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের কারণে সোমবার (১৭ জুলাই) দিনভর রাজধানীর সড়কগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় বিভিন্ন যানবাহনকে। প্রবেশমুখ এবং প্রধান প্রধান সড়কের এই যানজটে দিনভর ভুগতে হয় সাধারণ মানুষকে।

মঙ্গলবারও (১৮ জুলাই) দেশের প্রধান দুটি দল সড়কে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে নামে। বিএনপি পূর্বঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আয়োজন করে।

এতে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। সপ্তাহের ব্যস্ত দিনে এমন কর্মসূচির কারণে সাধারণ যাত্রী ও পরিবহন কর্মীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বিএনপির পদযাত্রা

রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রা শুরু হয় গাবতলী থেকে। পরবর্তী সময়ে তা বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।

বিএনপির পদযাত্রার রুট প্ল্যান হলো অনুযায়ী গাবতলী–টেকনিক্যাল মোড়–মিরপুর-১–মিরপুর-১০ গোল চত্বর– কাজীপাড়া–শেওড়াপাড়া–তালতলা (আগারগাঁও)–বিজয় সরণি–কারওয়ানবাজার–এফডিসি–মগবাজার–মালিবাগ–কাকরাইল–নয়াপল্টন (বিএনপি অফিস)–ফকিরাপুল–মতিঝিল (শাপলা চত্বর)–ইত্তেফাক মোড়–দয়াগঞ্জ–রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে শেষ হবে বাহাদুর শাহ পার্কে।

রুট প্ল্যানে গাবতলী থেকে মগবাজার অংশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা। আর মগবাজার থেকে বাকি সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথে অংশ নেবেন দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন রুট ঘুরে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে পদযাত্রা শেষ হবে বিকেল ৪টায়। কর্মসূচি চলাকালে এসব সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।

মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে সংঘর্ষের একপর্যায়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পদযাত্রায় সংঘর্ষ

এদিকে রাজধানীর মিরপুরে বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজ গেটের কাছে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আশপাশের সড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। মিরপুর-১০ নম্বর এবং শেওড়াপাড়া থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত পুরো রাস্তায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ দীর্ঘসময় তীব্র গরমে জ্যামে বসে হাঁসফাঁস করেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও শোভাযাত্রা

বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিপরীতে রাজধানীতে শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে শাহবাগ থেকে রমনা, রমনা থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। এতে আশপাশের এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি ও যানজট দেখা দেয়।

দুপুর ১টার দিকে শান্তি সমাবেশ শুরু হয়। পরে বিকেলে উন্নয়ন শোভাযাত্রা ‍শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ-এলিফ্যান্ট রোড-সিটি কলেজ হয়ে ধানমন্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে গিয়ে শেষ হবে।

এ অবস্থায় শোভাযাত্রা যেসব এলাকা দিয়ে যায় সেসব এলাকায় মার্কেট ও প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করেনি।

বিকেলে রাজধানীর রমনা বিভাগের ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যানবাহনের ধীরগতি আছে, কিন্তু থেমে নেই। তাই তীব্র যানজট বলা যাবে না।’

এর আগে দুপুরেও রাজধানীর রমনা, কাকরাইল, পল্টন এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি ছিল। এর প্রভাব পড়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়কে।

এ ছাড়া প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক বন্ধ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন। এতে অন্য রাস্তা ব্যবহার করায় অতিরিক্ত গাড়ির চাপে প্রেসক্লাব-পল্টন এলাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে।

পথে পথে ভোগান্তি

সকালে মিরপুর এলাকায় কথা হয় চাকরিজীবী আসাদুল হকের সঙ্গে। তিনি ফার্মগেট থেকে অফিসের কাজে মিরপুর-১২ নম্বর যাচ্ছিলেন। কাজীপাড়ায় এসে তিনি যানজটে পড়েন। প্রায় এক ঘণ্টা গাড়িতে বসে ছিলেন তিনি।

আসাদুল বলেন, ‘যে গরম ভাই। এর মধ্যে গাড়িতে এক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। ঘেমে শরীর ছেড়ে দিছে। খুব অসুস্থ বোধ করছি। নেমে যে হাঁটা দেব, তার শক্তিও নেই।’

কথা হয় আরেক যাত্রী মাহমুদ সজলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোম্পানির মাল ডেলিভারি দিতে বের হইছিলাম। কিন্তু এমন জ্যামে পড়ছি। দুপুরের মধ্যে মাল ডেলিভারি না দিতে পারলে খুব ঝামেলায় পড়ে যাব।’

এমনিভাবে রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহনে কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন