হোম জাতীয় দেশে করোনায় বেকার হবে দেড় কোটি মানুষ!

দেশে করোনায় বেকার হবে দেড় কোটি মানুষ!

কর্তৃক
০ মন্তব্য 91 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় আঘাত আসা শুরু হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও রফতানিমুখী এই দুই ধরনের অর্থনীতিতেই স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এই স্থবিরতার প্রভাব অচিরেই গিয়ে পড়বে চাকরির বাজারে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস কারণে আগামী তিন মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। যার মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ বসবাস করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে।

ধারণা করা হচ্ছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক কর্মজীবী মানুষ কর্মচ্যুত হবেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হিসাবে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরি হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত দেড় কোটি মানুষ কর্মচ্যুত হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই খারাপ খবর। এই দেড় কোটি মানুষ চাকরি হারালেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে অন্তত ৫ কোটি মানুষ (প্রতি পরিবারে গড়ে ৪ জন করে সদস্য)।

দেড় কোটির মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে আহসান এইচ মনসুর বলেন, গার্মেন্টস, ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স ও সরকার এই চারটি খাত ছাড়া বাকি সবই ইনফরমাল (অনানুষ্ঠানিক)। করোনায় ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) কর্মজীবী ছাড়া আর সবাই এখন বেকার। বেকারের এই সংখ্যা দেড় থেকে দুই কোটি। তিনি মনে করেন, ফরমাল কর্মজীবীদের মধ্যে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকরাও চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। কারণ, বাংলাদেশ থেকে যে তৈরি পোশাক রফতানি হয়, তার ৬৩ শতাংশ যায় ইউরোপে, বাকি ১৫ শতাংশ যায় আমেরিকায়। দুইটি বাজারেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, সেখানকার মানুষজন ঘরে বন্দি। এদিকে লকডাউনের কারণে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোও এখন বন্ধ। বন্ধ এইসব কারখানায় যারা চাকরিতে ছিলেন, সরকারের মাধ্যমে তারা হয়তো আগামী তিনমাস সুরক্ষা পাবেন। এখানেও একটা কথা আছে, বন্ধ কারখানার মালিকরা যদি ব্যাংক থেকে ঋণ না নেন, তাহলে কিছু করার আছে কি? আর ঋণ নিলেও এটা সাময়িক একটা ব্যবস্থা। এরপরে কী হবে? ব্যবসা করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী রাখবে কেমন করে?

আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশে শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তাটা সেভাবে নেই। যে কারণে মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকের চাকরি থাকে না। করোনার কারণে এখন অনেকেই চাকরিচ্যুত হওয়া শুরু করেছে। করোনার কারণে কতদিন কারখানা বন্ধ থাকবে, তা কেউ বলতে পারে না। আর যারা পরিবহন শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, দোকানের শ্রমিক বা অন্যান্য ইনফরমাল খাতের শ্রমিক, তারা তো বেকার হয়ে বসে আছে। খোদ রাজধানীতেই কয়েক লাখ বাস শ্রমিক এখন বেকার। ১০ লাখের বেশি রিকশাচালক কর্মহীন। তিনি বলেন, গত ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে যে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়েছে, এর ফলে যারা হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতের মতো অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, সেসব খাতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন বেকার বসে রয়েছেন।

তিনি উল্লেখ করেন, আমেরিকাতে গত তিন সপ্তাহে ১৭ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সময়ে বাংলাদেশেও ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমেরিকার বেকার হয়ে যাওয়া মানুষজন সরকার থেকে আগামী চার মাস ভাতা পাবেন। কিন্তু আমাদের দেশের বেকার হয়ে যাওয়া মানুষরা কিছুই পাবে না। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় সেখানে চাকরিচ্যুতি শুরু হয়েছে। ফলে এসব দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) বলছে, এই কয়েকদিনে প্রায় ১০ হাজার পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে মালিকরা ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানা প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত করেছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও কারখানার শ্রমিকেরা ছাঁটাই বা কর্মচ্যুতির শিকার হচ্ছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন