স্পোর্টস ডেস্ক:
আফগানিস্তান সিরিজের মাঝে হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তার এমন সিদ্ধান্তে অবাক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে হঠাৎ করে সংবাদ সম্মেলনে ডেকে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। এ নিয়ে জরুরি সভা ডেকে রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনা করেন বোর্ড সভাপতি পাপন ও বিসিবি পরিচালকরা।
সভাশেষে গণমাধ্যমকে পাপন বলেন, ‘তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে আমার নিয়মিতই যোগাযোগ হয়। বিশেষ করে একটা সিরিজ চলাকালে অধিনায়কের সঙ্গে তো হবেই। যেহেতু সে ওয়ানডে অধিনায়ক, তার সঙ্গে আমার তিন দিন আগে কথা হয়েছে। কালকেও কথা হয়েছে। অন্য কারও কথা জানি না। আমার পক্ষে বোঝার কোনো উপায় ছিল না যে এ ধরণের একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
বিশ্বকাপের বাকি মাত্র তিন মাস। তার আগে এশিয়া কাপ। এমন সময় তামিমের অবসরের সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর মনে করছেন পাপন। টাইগার ওপেনারকে সিদ্ধান্ত বদলের আহ্বান জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি।
তামিম বিসিবির কাছে কোনো পদত্যাগপত্র দেননি উল্লেখ করে পাপন বলেন, ‘ওয়ানডে দলে তামিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওকে আমাদের দরকার আছে। কথাটা যদি ওর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাহলে আমি খুশি হব। আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছি। ও সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন করে ফিরে আসুক। আমরা এটাই চাই।’
এর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্ট থেকে এবং মুুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি থেকে হঠাৎ করে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। হুট করে দুই তারকার এমন সিদ্ধান্তে মাঠে বিদায় জানাতে পারেনি বিসিবি। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত যেন তামিম থেকেও না আসে, সে জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে ওয়ানডে অধিনায়কের সঙ্গে কথা হতো পাপনের। টাইগার ওপেনার নাকি জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ তো অবশ্যই, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও খেলতে চান তিনি। কিন্তু ২০২৫ সাল পর্যন্ত যিনি খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তিনি কেন হঠাৎ করে লাল সবুজ জার্সিকে বিদায় জানালেন? দেশের একটি দৈনিকে তামিম ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাকে অধিনায়কত্ব দিয়ে আবার কেড়ে নেয়ার মতো অপমানজনক পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইছে বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা। হয়তো নিজের আত্মসম্মানবোধ থেকে একেবারেই সরে দাঁড়ালেন তামিম।
টাইগার ওপেনার বলেছিলেন, ‘ধরুন আমি আপনাকে একটা জিনিস দিলাম। কিন্তু দেয়ার পর থেকেই চিন্তায় আছি সেটা কিভাবে ফেরত নিয়ে আরেকজনকে দেয়া যায়। সেটা আবার আপনিও বুঝতে পারছেন। তাহলে কি আপনি সেটা রাখবেন? সেটা রেখে দেয়া কি আপনার জন্য সম্মানজনক হবে?’
পাপন অবশ্য বলেছেন, এমন কোনো চিন্তা তাদের মাথায় ছিল না। বরং এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক হিসেবে তামিমকেই রাইট চয়েজ বলছেন তিনি। পাপন বলেন, ‘আপনাদের কী মনে হয়, এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে এসে এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব, কোনো কারও জন্য। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক হিসেবে তামিম রাইট চয়েজ ছিল। আমার ধারণা আবেগের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
এর আগে নিজেকে আনফিট দাবি করেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ খেলায় চটেছিলেন পাপন। গণমাধ্যমে বোর্ড সভাপতির করা তীর্যক মন্তব্যে তামিম অবসরের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা এমনটা অবশ্য মানতে নারাজ পাপন। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। এরকম সিদ্ধান্ত আরও এক হাজার বার আসলে আমি এক হাজার বারই বলব। ওটার সঙ্গে এটাকে আমি কোনোভাবেই মেলাতে চাই না। ম্যাচের আগে কেউ যদি বলে আমি ফিট না, তবুও খেলব, এ জিনিস হতেই পারে না। এগুলো কোনোভাবেই, কোনো বোর্ড কখনো গ্রহণ করবে না।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলন ডাকার কারণ জানতে সকাল থেকে তামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন বোর্ড সভাপতি। কিন্তু কোনোভাবেই তাকে পাচ্ছিলেন না। দুপুরে অবসরের সিদ্ধান্ত নিলে, কোনো উপায় না পেয়ে টাইগার ওপেনারের বড় ভাই নাফিস ইকবালকে বার্তা পাঠান পাপন। কিন্তু সে বার্তার এখনো কোনো উত্তর পাননি বোর্ড সভাপতি।
পাপন বলেন, ‘সকাল থেকে চেষ্টা করে তামিমকে পাচ্ছি না। নাফিস ইকবালের সঙ্গে কথা বলেছি। ওর মাধ্যমেও পাইনি। বিকেল ৫টার পর নাফিসের কাছে বার্তা পাঠাই। আমি বলেছি, দয়া করে তামিমকে বলো, আমি চাই অধিনায়ক হিসেবে সে অন্তত এ সিরিজটা শেষ করুক। এরপর আমরা বসব এবং আলোচনা করে ঠিক করব, সামনে কী করা যায়। তার মতো একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের আবেগের বশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না, ঠিক হচ্ছে না। তার থাকাটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নাফিস সে বার্তা তামিমের কাছে পৌঁছে দেবে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটার কোনো পাল্টা উত্তর পাইনি।’
শেষ পর্যন্ত তামিম যদি বিসিবির প্রস্তাবে সাড়া না দেন, তাহলে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের পরবর্তী অধিনায়ক হবে কে? আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচের দায়িত্বে আসবে কে?
পাপন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তামিম আমাদের অধিনায়ক। আমরা কোনো স্থায়ী অধিনায়কের কথা এখন পর্যন্ত চিন্তা করছি না। তামিম না খেললে আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরবর্তী দুই ম্যাচে দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী অধিনায়ক লিটন দাস।’
২০০৭ সালে ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছিল তামিমের। এ সংস্করণে ২০১৯ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার অধীনে ৩৭ ম্যাচে ২১টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।