হোম অন্যান্যসারাদেশ ঝিকরগাছা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত 
ঝিকরগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ 
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ এস এম এরশাদের বিরুদ্ধে এমপিও কাজে ঘুষ গ্রহণ, শিক্ষা কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি ও অযথা হয়রানির করার অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।
একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের অভিযোগ এবং বিভিন্ন পত্রিকায় দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক নিভা রানি পাঠক এ অভিযোগ তদন্ত করেছেন। ২৬ শে জানুয়ারি তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, ১ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত কার্য সম্পন্ন করা হবে। যার স্মারক নম্বর – ৩৭.০২.৪৭০০.০০০.০১.০০১.০১.১৭-১৩৩।
মঙ্গলবার সকালে ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক কার্যলয়ে তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার যেখানে দূর্নীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্হা গড়ে তোলার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে, সেখানে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এএসএম জিল্লুর রশিদের মতো ব্যক্তির কারণে সবকিছু ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি    পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দেন তার রাজনৈতিক এবং মন্ত্রালয়ের দাপট অনেক বেশি। কারণে অকারণে তিনি শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
তিনি এ পর্যন্ত যত গুলো উপজেলায় চাকরি করেছেন, প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে শেষ পর্যন্ত বিতাড়িত, অপমানিত ও মারধোরও খেয়েছেন। তার নিকট না আসলে কোন ফাইল সেন্ড হয়না। তার সময়ে আনুমানিক ২৫০ জন শিক্ষক কর্মচারীর এমপিও ভূক্ত, সহকারী অধ্যাপক ও টাইম স্কেল প্রদান করা হয়েছে।  এ ফাইলগুলো সেন্ড হবার জন্য সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লেনদেন হয়েছে। ব্যানবেইজে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর তরিকুল ইসলামের মাধ্যমে টাকার লেনদন গুলো হয়েছে।
এমপিও চালু হবার পর তার পূর্বেও কর্মস্থল বাঘারপাড়া উপজেলা ও যশোর জেলাতে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির তদন্ত হয়েছিল। বর্তমানে টাইমস্কেল ১০-১৫ হাজার টাকা নেন এবং রিজেক্ট ফাইলগুলো ১৫-৩০ হাজার টাকা নেন। এছাড়া জেলা শিক্ষা অফিস ডিবি অফিস পার করবে বলে মোটা অংকের চুক্তিতে ফাইল সেন্ড করেন। যা তার আইডি চেক করলে বোঝা যাবে। এছাড়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দূর্নীতি দমন কমিশনের অনুষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাবদ যে বরাদ্দ এসেছিল, তা প্রতিষ্ঠানে না দিয়ে এবং কারোর সাথে আলাপ আলোচনা না করে নিজের ইচ্ছামত ৬ টি বই কিনে দিয়েছে।
কিন্তু দুদকের নির্দেশনা এমনটি ছিল না। গ্রীস্ম ও শীতকালীন বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের চাঁদার টাকা হয়ে থাকে। এর আগে প্রত্যেক কর্মকর্তা শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দিতেন। তারাই সবকিছুই পরিচালনা করতেন,কিন্তু এএসএম জিল্লুর রশিদ কম্পিউটার অপারেটর তরিকুলের সহযোগিতায় সবকিছু করে মোটা অংকের টাকা বাঁচিয়ে পকেটে ঢুকাতেন। শিক্ষা অফিস আয়োজিত মেলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের  অনুষ্ঠানে তিনি পার্সিয়ালিটি করেন। নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হতে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এর মধ্যে বালিয়াডাঙ্গা গৌরশুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫ লক্ষ, বোধখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩ লক্ষ, বাউশা আরএন মাধ্যমিক বিদ্যালয় দেড় লক্ষ,এমসিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩ লক্ষ, মিশ্রীদেয়াড়া দাখিল মাদ্রাসা ৫ লক্ষ, নবীননগর দাখিল মাদ্রাসা ৩২ হাজার (এমপির হস্তখেপের জন্য নিতে পারেন নি) মোট ১৭ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা নিয়েছেন।  বোধখানা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদদীন ৬০ হাজার টাকা না দেওয়ায় তার পরিবর্তে হাফিজুর রহমান নামে একজনকে এমপিভুক্ত করেছেন বলে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া ও বিভিন্ন স্কুল মাদ্রাসা থেকে সবার চক্ষু ফাকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এএসএম জিল্লুর রশিদ তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,বেনামে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তদন্তকালে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।২০১৭ সালের যশোর সদর উপজেলার অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। যা ঐ সময় তদন্তে সত্যতা পাননি তদন্তদল। আমাকে হয়রানি করার জন্য মূলত এ অভিযোগ করা হয়েছে।
এ সকল অভিযোগের উপর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা রেঞ্জের উপপরিচালক নিভারানী পাঠক তদন্ত করেছেন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, সারাদিন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা হয়েছে।  লিখিত ও মৌখিকভাবে জানাশোনা করেছি। এখন কোন কিছুই বলতে পারবনা। পরে রিপোর্ট পেশ করবো।
s

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন